Illegal Construction

জরিমানায় বেনিয়মে ছাড়!

বামফ্রন্ট সরকারের আমলের শেষের দিকে মাওবাদীদের নাশকতামূলক কাজের আতঙ্কেও খাতড়া মহকুমার অনেকে বাঁকুড়ায় সংসার সরিয়ে আনেন।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ ০৭:২২
Share:

বাঁকুড়ায় বাড়ছে বহুতলের সংখ্যা।কেন্দুয়াডিহিতে তোলা ছবি।রাজদীপের কপি আছে।

পরিকল্পনা বহির্ভূত ভাবে বাড়ি তৈরি করে পুরসভাকে স্রেফ আর্থিক জরিমানা দিয়ে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন অনেক প্রোমোটার। বাঁকুড়া শহরে এ ভাবে বেশ কিছু অবৈধ বহুতল মাথা তুলেছে বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। যদিও পুরসভার তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে।

Advertisement

রাজ্যের অন্য এলাকার মতো এখানেও উন্নত জীবনযাত্রা ও সন্তানদের ভাল স্কুলে পড়ানোর সুযোগ নিতে গ্রাম-গঞ্জের অনেকেই জেলা সদর বাঁকুড়ায় উঠে এসে বাড়ি তৈরি করেছেন বা বহুতলের বাসিন্দা হয়েছেন। তবে বামফ্রন্ট সরকারের আমলের শেষের দিকে মাওবাদীদের নাশকতামূলক কাজের আতঙ্কেও খাতড়া মহকুমার অনেকে বাঁকুড়ায় সংসার সরিয়ে আনেন। মূলত সে সময় থেকেই বাঁকুড়া শহরে জমির দর হু হু করে বাড়তে শুরু করে। রাজ্যে পালাবদলের পরে আবাসন ব্যবসাতেও রমরমা শুরু হয়। বর্তমানে শহরময় চোখ ঘোরালেই সুউচ্চ বহুতল নজরে পড়ে। তবে সেগুলির ক’টি নিয়মনীতি মেনে গড়া হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে।

কোথাও জলা জমি ভরাট করে ভবন তৈরি, কোথাও পুরসভার অনুমতি না নিয়েই ভবনের উচ্চতা বাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগ শোনা গিয়েছে। আদালতের নির্দেশে সম্প্রতি শহরে কয়েকটি নির্মাণকে অবৈধ ঘোষণা করে ভাঙতে দেখা গিয়েছে পুরসভাকে। অথচ পুরসভার তরফে এখনও কোনও ভবনকে অবৈধ ঘোষণা করে পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি।

Advertisement

এই প্রসঙ্গেই বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘শুনতে পাচ্ছি, বিরোধী-শূন্য পুরসভায় যথেচ্ছ ভাবে জরিমানা আদায় করে অবৈধ ভবন নির্মাণে ছাড়পত্র দিচ্ছে পুরসভা। যে ক’টি ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ এসেছে, সেগুলিই শুধু তারা ভাঙতে বাধ্য হয়েছে। অথচ শহরের বহু জায়গায় জলা জমি ভরাট করে বহুতল তৈরি করা হলেও পুরসভা নির্বিকার।’’

সে অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বাঁকুড়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের অলকা সেন মজুমদার। তাঁর দাবি, ‘‘রাজনৈতিক স্বার্থে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে বিজেপি। অবৈধ নির্মাণ আমরা কোনও ভাবেই মেনে নিই না।’’ তাহলে কেন অবৈধ নির্মাণ রুখতে পুরসভাকে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করতে যায় না? অলকা জানান, কোনও জায়গায় বাড়ি বা আবাসন গড়তে গেলে প্রথমে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বিশেষ পোর্টালে নকশা (প্ল্যান) অনুমোদন করা হয়। সেখানে ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই আবেদনটি সংশ্লিষ্ট পুরসভায় যায়। পুরসভা সব দিক খতিয়ে দেখে বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে ওই নির্মাণকাজের ছাড়পত্র দেয়।

তবে বাড়ি তৈরির জন্য প্রথমে যে নকশা জমা করা হয়, সব ক্ষেত্রে যে তা মানা হয় না, আড়ালে মানছেন শাসকদলের পুর-প্রতিনিধিদের অনেকেই।তাঁরা জানান, অনেক সময়ই দেখা যায়, নকশায় যে ভাবে বেডরুম, বারান্দা ও অন্য নির্মাণের কথা জানানো হয়েছিল, বাস্তবে তা করা হয় না। অনেক সময় বহুতলের উচ্চতাও বাড়িয়ে নেওয়া হয় পুরসভাকে কিছু না জানিয়েই। সেক্ষেত্রে বাড়িগুলি কী ভাবে ছাড়পত্র পায়? পুরপ্রধান বলেন, ‘‘কেউ যদি বাড়ির নকশা বদলে নিজের জায়গার মধ্যেই বেডরুম বা ড্রইংরুমের জায়গা বদলে ফেলে সেক্ষেত্রে অনেক সময় ‘রিভাইজ প্ল্যান’ জমা করতে বলা হয়। আবার কেউ যদি নিজের জায়গার বাইরে গিয়ে নির্মাণ করেন, তাহলে তার ছাড়পত্র পাওয়ার আর কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।’’

বিরোধীদের দাবি, পুর-আইন মেনে জমি ছেড়ে নির্মাণ কাজ না করা, অন্যের জায়গা দখল করে নির্মাণের মতো কত অভিযোগ বাঁকুড়া পুরসভায় জমা পড়ে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পুরসভার অবশ্য দাবি, এমন অভিযোগ পেলেই শুনানি করা হয়। সমাধান না হলে আদালতের নজরে আনা হয়। (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement