bankura

পড়ুয়াদের আবদারের জয়, বদলি নিলেন না প্রধান শিক্ষক

২০১৬ সালে তিনি স্থায়ী প্রধান  শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরেই পরিবেশ বদলে যায়। স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হওয়া, বাগান তৈরি করা থেকে নানা শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড শুরু হয়।

Advertisement

সুশীল মাহালি 

সিমলাপাল শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৯:০৯
Share:

স্নেহের দাবি। মনোরঞ্জন গোস্বামীকে ঘিরে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

অবসরের দোরগোড়ায় আবেদন করে বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে বদলির অর্ডার পেয়ে স্বস্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে থেকে যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার পড়ুয়াদের একটানা আবদার এড়িয়ে যেতে পারলেন না বাঁকুড়ার সিমলাপালের মাচাতোড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন গোস্বামী। বদলি না নিয়ে কর্মজীবনের শেষ চার বছর এই স্কুলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। খাতড়া মহকুমা সহকারী স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অনিমেষ শতপথী বলেন, ‘‘ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

Advertisement

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে। সেখানে এই স্কুলের পড়ুয়া থেকে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও পরিচালন সমিতির মনোরঞ্জনকে ‘যেতে নাহি দিব’ মনোভাব যেন ছাত্র-শিক্ষকের মধুর সম্পর্কের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে দিল।

২০১৬ সালে এই স্কুলে প্রধানশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মনোরঞ্জন। স্কুলের সহ-শিক্ষক অভিজিৎ দাস, রামকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘আগে স্কুলে স্থায়ী প্রধানশিক্ষক ছিল না। ডামাডোল পরিস্থিতি ছিল। ২০১৬ সালে তিনি স্থায়ী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরেই পরিবেশ বদলে যায়। স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হওয়া, বাগান তৈরি করা থেকে নানা শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। প্রতিটি ক্লাসের পড়া তিনি নিজে ঘুরে ঘুরে দেখেন। প্রতিটি পড়ুয়া ও শিক্ষক থেকে শিক্ষাকর্মীর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক। তাই আমরাও তাঁকে ছাড়তে চাইনি।’’

Advertisement

স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রশান্তকুমার সিংহবাবু বলেন, ‘‘ওনার মতো শিক্ষক সহজে পাওয়া যায় না। তাই স্কুলের পরিচালন সমিতিও তাঁকে ছাড়তে চায়নি। এ দিন তাঁকে রিলিজ অর্ডার দেওয়ার বৈঠক ছিল। তার আগেই পড়ুয়ারা তাঁকে ছেঁকে ধরে আটকে দেওয়ায় আমাদের কাজ সহজ হয়ে গেল।’’

খাতড়া শহরের পূর্বাশা এলাকার বাসিন্দা মনোরঞ্জন জানান, বাড়ি থেকে মাচাতোড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ২৪ কিমি। বয়স হওয়ার বাইকে আসা-যাওয়ার ঝক্কি থেকে রেহাই পেতে তিনি অবসরের আগে শেষ ক’টা বছর বাড়ির কাছাকাছি কোনও স্কুলে বদলি চেয়ে উৎসশ্রী পোর্টালে আবেদন করেন। পুজোর ছুটির আগে জানতে পারেন, বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে রানিবাঁধের ব্লকের পুরানপানি হাইস্কুলে তাঁর বদলি হচ্ছে। পুজোর ছুটি শেষের পরে পাঁচ দিনের মধ্যে তাঁকে সেখানে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু সে খবর ছুটির মধ্যেই পড়ুয়াদের কানে পৌঁছে গিয়েছিল।

মনোরঞ্জন এ দিন স্কুলের আসতেই পড়ুয়ারা তাঁকে অফিস ঘরে ঘিরে ধরে দাবি করতে থাকে, ‘‘স্যার আপনাকে আমরা ছাড়ব না। এখানেই থাকতে হবে।’’ দশম শ্রেণির মধুমিতা সামন্ত থেকে নবম শ্রেণির কৃষানু পন্ডা, অষ্টম শ্রেণির কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সপ্তম শ্রেণির রাহান খানেরা বলে, ‘‘হেডস্যার আমাদের সবাইকে খুব স্নেহ করেন। তাঁর মতো আর কাউকে পেতাম না। আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়তাম।’’

কয়েক ঘণ্টা ধরে বোঝানোর পরেও পড়ুয়াদের ভালবাসার দাবির কাছে হার মানেন মনোরঞ্জন। পরে বলেন, ‘‘এক জন শিক্ষকের কাছে ছাত্রছাত্রীদের শ্রদ্ধা, ভালবাসার থেকে দামি আর কিছু হতে পারে না। তাই কর্মজীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই স্কুলে থাকার সিদ্ধান্তই নিলাম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement