ঝমঝমিয়ে: সিউড়িতে বুধবার বিকেলে। নিজস্ব চিত্র
দুপুর থেকেই আকাশ কালো করে মেঘ জমছিল। মুষলধারে না হলেও, বিকেল থেকেই শুরু বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির। বুধবার, কালীপুজোর ঠিক আগের দিনে জেলার এমন ছবি ভাবিয়ে তুলেছে কালীপুজোর উদ্যোক্তা থেকে সাধারণ মানুষ— সকলকেই। এঁদের প্রশ্ন, দুর্গাপুজোর মতো কালী পুজোও কি বৃষ্টিতে ভাসবে? আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, বুধ থেকে শুক্র তিন দিনই বৃষ্টি হবে।
ঘটনা হল, এ বার অমাবস্যা লাগছে বুধবার রাতেই। থাকছে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত। সিংহভাগ কালীপুজো ক্যালেন্ডারে কালীপুজোর দিন বৃহস্পতিবার হলেও কিছু প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরে পুজো হচ্ছে বুধবার রাতেই। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে পুজো দিয়ে যাওয়া থেকে, সামনের কয়েক’টা দিন আনন্দে মেতে ওঠার মাঝে রীতিমত হুমকি দিয়ে রাখছে প্রতিকূল আবহাওয়া। মন খারাপের অবশ্য কারণ রয়েছে। নিম্নচাপের দৌরাত্ম্যে দুর্গাপুজো এ বার মোটেই ভাল কাটেনি জেলাবাসীর। নীল আকাশে পেজা তুলোর মতো মেঘ, শারদীয় আকাশের চেনা ছবি মুছে পুজোর আগে বেশ কয়েক দিন শ্রাবণী মেঘে ছেয়ে গিয়েছিল আকাশ। যখন-তখন সেই মেঘ ফুঁড়ে নেমে আসছিল বৃষ্টি। কোনও ক্রমে চতুর্থী থেকে সপ্তমী পর্যন্ত বৃষ্টি বিরাম নিলেও, অষ্টমী-নবমী ফের ধুইয়ে দিয়েছে বৃষ্টি। সেখানে না থেমে বৃষ্টি হয়েছে লক্ষ্মীপুজোর আগে ও পড়ে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও।
আবহাওয়া দফতরের তখনকার ভবিষ্যৎবাণী মানলে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সক্রিয় থাকার কথা ছিল বর্ষার। দুর্গাপুজো না হয় সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ছিল, তাই ভুগিয়েছে। পুজোর পরেও একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপের জেরে বর্ষা দীর্ঘায়িত হয়েই গিয়েছে। তাই বলে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহেও বৃষ্টি। এতটা খারাপ আবহাওয়া আশা করেননি জেলাবাসী।
উৎসব প্রিয় বাঙালি তথা জেলার মানুষ ভেবেছিলেন, কার্তিক মাসের ১ তারিখ যেহেতু কালীপুজো, তাই বৃষ্টি থেকে কালীপুজোয় রেহাই মিলবে। কিন্তু, সেই সম্ভাবনা কার্যত ধুয়ে গিয়েছে বুধবারই। বৃষ্টি হয়েছে রামপুরহাট, বোলপুর, সিউড়ি সহ মহকুমার কমবেশি সব এলাকাতেই। পুজো দিতে বেরিয়ে এবং কালীপুজোর প্রস্তুতিতে কেনাকাটা করতে বাইরে বেরিয়ে জামাকাপড় ভিজে একসা। সেটাই মন খারাপ করে দিয়েছে, বলছেন জেলার মানুষ।
মানুষের অসুবিধা তো আছেই। বৃষ্টিতে পাকা মন্দির ও বড় কালী পুজো উদ্যোক্তাদের থেকেও বেশি সমস্যায় ছোটছোট পুজোর উদ্যোক্তারা। সামান্য বাঁশ কাপড়ের তৈরি মণ্ডপ বা ছোটখাটো থিম নিয়ে যাঁরা কালী পুজো করছেন, বৃষ্টির রক্তচক্ষু তাঁদের প্রতিও। তেমন পুজো উদ্যোক্তাদের কথায়, ‘‘এখন বৃষ্টি হবে কে জানত।’’
এ ভাবে চললে আনন্দ মাটি খুদেদেরও। বৃষ্টির মধ্যে বাইরে গিয়ে আতসবাজি পোড়ানো বা আলোর উৎসবে ঘিরে আনন্দ করা— কোনওটাই হবে না। বড়রাও বারণ করছেন, ‘‘এখন ভিজো না অসুস্থ হয়ে পড়বে। সামনেই স্কুল খুলবে।’’ এই পরিস্থিতিতে ছোট থেকে বড় সকলেই চাইছেন, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসকে ভুল প্রমাণ করে সূর্য উঠুক আজ, বৃহস্পতিবার।