Jhalda

চার বছরেই অব্যবস্থায় সত্যকিঙ্কর সংগ্রহশালা

স্মৃতি রক্ষার দায় শুধু প্রশাসনের উপর ছেড়ে না দিয়ে স্মৃতি রক্ষার্থে ঝালদার আমজনতাকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন শহিদ পরিবারের সদস্যেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝালদা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০১:২৫
Share:

অনাদরে: ঝালদা শহরের প্রান্তে মায়াসরোবর রোডে। নিজস্ব চিত্র।

প্রতিবারের মতো শুক্রবার থেকে ঝালদায় শুরু হয়েছে সত্যঘাট মেলা। আজ, রবিবার মেলার শেষ দিন। কিন্তু যাঁর স্মৃতিতে এই মেলা, মানভূমের সেই প্রথম শহিদ সত্যকিঙ্কর দত্তের নামাঙ্কিত সংগ্রহশালা ঢেকেছে আগাছা আর আবর্জনায়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শহিদের স্মৃতি বিজড়িত ওই সংগ্রহশালাটি নষ্ট হওয়ার পথে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

Advertisement

শনিবার মেলার দ্বিতীয় দিন ওই সংগ্রহশালার কাছে গিয়ে দেখা যায়, চার দিকে মাথা তুলেছে আগাছা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা। এঁটো পাতা, প্লাস্টিকের গ্লাস, মদের ভাঙা বোতল থেকে অনেক কিছুই পড়ে সেখানে। কয়েক বছর আগে চালু করা সংগ্রহশালার জানালার কাচও আস্ত নেই।

এ দিন মেলায় আসা ঝালদা শহরের গোপাল লাহিড়ী, পাশের চাতমঘুটু গ্রামের বুনু মাহাতোর কথায়, ‘‘দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটা সংগ্রহশালা। ওই সংগ্রহশালা রক্ষা করতে প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত।’’

Advertisement

সংগ্রহশালার এই অব্যবস্থায় ক্ষুব্ধ সত্যকিঙ্করবাবুর উত্তরসূরী অনির্বাণ দত্ত। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সংগ্রহশালার যা অবস্থা, তা শহিদকে অপমান করার সমান। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশাসনিক সহায়তার পাশাপাশি ‘শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটি’ গঠন করা দরকার।’’

মেলায় আসা ঝালদা শহরের বাসিন্দা দেবাশিস দত্তের মতে, ‘‘কাছাকাছি স্কুলগুলির পড়ুয়াদের নিয়ে মাঝে মধ্যে ওই সংগ্রহশালায় শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা গেলে, তারা যেমন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এলাকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদানের কথা জানতে পারবে, তেমনই এই সংগ্রহশালার ব্যবহারও হবে।’’

স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতোর উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল সত্যকিঙ্কর স্মারক সংগ্রহশালা। ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি ঝালদার সত্যভামা বিদ্যাপীঠের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে এসে এই সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। নেপালবাবু বলেন, ‘‘সংগ্রহশালাটি অধিগ্রহণের জন্য সরকারি স্তরে কয়েকবার চিঠি পাঠিয়েছি। কথা বলেছি রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গেও।’’

ইতিহাস জানাচ্ছে, ১৯২৯ সালের এপ্রিলে ঝালদায় মানভূম কংগ্রেসের সম্মেলন হয়। তারপরেই ওই এলাকায় কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হতে শুরু করে। সত্যকিঙ্কর ওই সম্মেলনে সেচ্ছাসেবক ছিলেন। ওই বছর ১০ ডিসেম্বর ইংরেজদের ষড়যন্ত্রে গুপ্তঘাতকের বিষ মাখানো কুঠারের আঘাতে আহত হন তিনি। তিন দিন পরে পুরুলিয়া হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। নেপালবাবুর কথায়, ‘‘সত্যকিঙ্করের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেননি এলাকাবাসী। মৃত্যুর এক মাস দু’দিন পরে মাঘের প্রথম দিনে ঝালদা যুব সঙ্ঘের উদ্যোগে সত্যঘাট মেলা আয়োজিত হয়।’’ সেখানে হাট বসানো নিয়েও গোলমাল বাধে। পুলিশের গুলিতে মারা যান সহদেব মাহাতো, মোহন মাহাতো, গোকুল মাহাতো, শীতল মাহাতো এবং গণেশ মাহাতো। আহত হন অনেকে। সে সব ইতিহাস, ছবি, মডেল রয়েছে সংগ্রহশালায়। সে সব নষ্টের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তবে স্মৃতি রক্ষার দায় শুধু প্রশাসনের উপর ছেড়ে না দিয়ে স্মৃতি রক্ষার্থে ঝালদার আমজনতাকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন শহিদ পরিবারের সদস্যেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement