ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া ঝালদার তুলিনে নাকা পয়েন্ট।
দু’দিনের মধ্যে পুরুলিয়ায় ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’-এর সংখ্যা বেড়েছে আটটি। পুরুলিয়া শহর-সহ রেল-শহর আদ্রাতেও নতুন করে কয়েকজন করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারের থেকে শনিবারের ‘লকডাউন’ আরও সর্বাত্মক হল।
তার উপরে এ দিন ভোরে পুরুলিয়া শহরের সাহেববাঁধের রাস্তায় প্রাতর্ভ্রমণে বেরোনো লোকজনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গিয়েছে শুনেই লোকজনের বাইরে বেরোনো কমে যায়। ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’গুলিতে লোকজন ‘লকডাউন’ মানছেন কি না, তা দেখতে গতবারের মতো এ দিনও ‘ড্রোন’ উড়িয়ে নজরদারি চালায় পুলিশ।
বৃহস্পতিবারের ‘লকডাউন’-এ বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু লোকজনকে বাড়ির বাইরে বার হতে দেখা গেলেও, শনিবার পুরুলিয়া শহর, আদ্রা, রঘুনাথপুর, মানবাজারের রাস্তাঘাট ছিল আরও বেশি শুনশান। পুলিশকর্মীরা অবশ্য রাস্তায় রাস্তায় টহল দেন। তবে ‘লকডাউন’ অমান্য করা লোকজনকে বাড়ি ফেরাতে তাঁদের এ দিন তুলনায় কম দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মতে, পুরুলিয়া জেলায় করোনা-সংক্রমণ দিন-দিন বাড়ছে বলে লোকজনের বাইরে বেরনোর প্রবণতা কিছুটা হলেও কমেছে।
এ দিন কার্যত ভোর থেকেই ‘লকডাউন’ কার্যকরী করতে পুরুলিয়া শহরে তৎপর হয়েছিল পুলিশ। সূত্রের খবর, প্রাতর্ভ্রমণকারীদের সাহেববাঁধ থেকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গিয়েছে শুনে বিনা কারণে বাড়ির বাইরে বার হতে অনেকেই আর ঝুঁকি নেননি। তবুও যাঁরা বেরিয়েছিলেন, ছাড় পাননি। পুলিশ তাঁদের হয় আটক করেছে, নয়তো বাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছে। তেমনই খণ্ড খণ্ড চিত্র দেখা গিয়েছে পুরুলিয়া শহর জুড়ে।
সকাল সাড়ে ৯টায় মোটরবাইক নিয়ে বেরনো এক যুবককে বাসস্ট্যান্ড মোড়ে আটকান পুলিশকর্মীরা। যুবক সকালের খাবার কিনতে বেরিয়েছেন শুনে তাঁকে ধমক দিয়ে পুলিশকর্মীরা বাড়ি পাঠান।
বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ হরিপদ সাহিত্য মন্দির এলাকায় সাহেববাঁধের রাস্তায় নাকা চেকিং পয়েন্টে পুলিশ কর্মীরা আটকান এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিকে। ‘‘কেন তিনি ‘লকডাউন’-এ বাড়ির বাইরে বেরিয়েছেন’’— পুলিশ কর্মীদের প্রশ্ন শুনে ওই ব্যক্তির জবাব দেন, বাড়ির পুজো করা ফুল তিনি সাহেববাঁধে ফেলতে এসেছেন। ‘লকডাউন’-এ জরুরি কাজ ছাড়া, যে বাইরে বেরোনো যায় না, পুলিশকর্মীরা সে কথা বোঝাতে গেলে তাঁর সঙ্গে বচসা শুরু হয়। পুলিশ কড়া হতেই শেষে ওই ব্যক্তি বাড়িমুখো হন।
বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ হাটের মোড় এলাকায় এক মোটরবাইক আরোহীকে আটকায় পুলিশ। ওই যুবক জানান, তাঁর বাড়িতে বসে থাকতে ভাল লাগছে না বলে তিনি বেরিয়েছেন। পুলিশ কর্মীরা বলেন, ‘‘পুলিশের ভ্যানে বসলে ভাল লাগবে?’’ আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ি ফিরে যান ওই যুবক। এ ধরনের বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা বাদ দিলে গোটা জেলা জুড়ে ‘লকডাউন’ ছিল সর্বাত্মক।
অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ড সীমানায় পুলিশের তৎপরতা ছিল গতবারের থেকে কিছুটা বেশি। ঝালদা, বান্দোয়ান, নিতুড়িয়া, পাড়া প্রভৃতি থানায় শুক্রবার ঝাড়খণ্ড থেকে আসা গাড়িগুলিকে কার্যত কোনও প্রশ্ন না করেই ছেড়ে দিয়েছিলেন সীমানার নাকা চেকিং পোস্টে থাকা পুলিশ কর্মীরা। এ দিন চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া, অন্য কোনও কারণেই এই রাজ্যে লোকজনকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
ঝালদার তুলিনের নাকা পয়েন্টে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের জামুদাগা থেকে মোটরবাইকে মা ও ভাইকে চাপিয়ে পুরুলিয়ার চাষে আত্মীয়ের বাড়িতে আসছিলেন যুবক মানিক মণ্ডল। পুলিশ মোটরবাইক আটকে তাঁদের ঝাড়খণ্ডেই ফেরত পাঠিয়ে দেয়।