বাড়ি উজিয়ে পোশাক দিল পুলিশ

গ্রামের লালমাটির রাস্তায় একরাশ ধুলো উড়িয়ে পুলিশের জিপটা বৃদ্ধ কিঙ্কর ঘোষের কুঁড়েঘরের সামনে দাঁড়াতেই গ্রামবাসীর মধ্যে ফিসফাস শুরু হয়ে গেল— হলটা

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩২
Share:

মানবিক মুখ।— নিজস্ব চিত্র

গ্রামের লালমাটির রাস্তায় একরাশ ধুলো উড়িয়ে পুলিশের জিপটা

Advertisement

বৃদ্ধ কিঙ্কর ঘোষের কুঁড়েঘরের সামনে দাঁড়াতেই গ্রামবাসীর মধ্যে ফিসফাস শুরু হয়ে গেল— হলটা
কী? দরজা খুলে ঘাবড়ে গেলেন কিঙ্করবাবু নিজেও। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, “দোষ করলাম না কি?’’ খাকি
উর্দিধারী ওসি হেসে জবাব দিলেন, “তা কেন। আপনাদের জন্য উপহার এনেছি।”

পুলিশের হাত থেকে নতুন জামা-কাপড় পেয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কিঙ্করবাবু ও তাঁর স্ত্রী সুষমাদেবী। তিনি বলেন, “১২ বছর আগে ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে পুজোয় উপহার তো দুরের কথা, দু’বেলা ভরপেট খাবার জোটে না। পুজোয় আর কোনও দিন নতুন শাড়ি গায়ে তুলবো, সেই আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। পুলিশের কাছ থেকে পুজোর উপহার পাবো, স্বপ্নেও ভাবিনি।’’ পাত্রসায়রের কান্তোড় গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকে অবাক পুলিশের এমন ভূমিকায়।

Advertisement

পুজোর আগে পুলিশের থানায় বা জনবহুল এলাকায় শিবির করে বস্ত্রদান নতুন নয়। তবে পাত্রসায়র থানার পুলিশ জনসংযোগের এই কাজটাই করছেন অন্য ভাবে। পাত্রসায়র থানার পুলিশ বাছাই করে দুঃস্থ, নিঃসঙ্গ প্রৌঢ়-প্রৌঢ়াদের তালিকা তৈরি করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে নতুন শাড়ি, ধুতি। পাত্রসায়রের ওসি মানস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বাবা, মাকে তো ছেলেরা বাড়িতে গিয়েই উপহার দেয়। পুলিশ হলেও আমরা তাঁদের সন্তানের মতোই। এটা বোঝাতেই বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা ঠিক করেছি।” পাত্রসায়র থানার এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরাও।

পুলিশ যে সত্যিই মন জয় করেছে তা স্পষ্ট উপহার প্রাপকদের কথাতেও। পাত্রসায়রের মুকুন্দপুরের সত্তরোর্ধ্ব বিধবা সোনা দাসীর ছেলে, বৌমা থাকলেও তিনি একাই থাকেন। পুলিশের হাতে নতুন শাড়ি পেয়ে আবেগে পুলিশ কর্মীদের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন তিনি। পাত্রসায়রের আতড়া গ্রামের বাসিন্দা ফেলি বাগদির স্বামী মারা গিয়েছেন বছর দশেক আগে। একমাত্র ছেলে উত্তম বাগদি প্রতিবন্ধী। পরিচারিকার কাজ করে ফেলিদেবী সংসার টানেন। তাঁরা বলছেন, “পুলিশেরও মন আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement