বীরভূমের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কড়া বার্তা ফিরহাদ হাকিমের। — নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম গিয়েছেন বীরভূম সফরে। এর মধ্যেই শনিবার রাতে সিউড়ির বাঁশজোড়ে খুন হন তৃণমূল কর্মী ফয়জল শেখ। তা নিয়ে উত্তপ্ত ওই এলাকা। এই আবহে রবিবার সকালে সিউড়ি সার্কিট হাউসে সাংবাদিক বৈঠক করে ফিরহাদ জানালেন, সকালেও তিনি শুনেছেন বোমার আওয়াজ। সিউড়ি থেকে কিছুটা দূরে বাঁশজোড় গ্রাম। সেখানে ফয়জল খুনের ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্ত কাজল শাহ-সহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি, রাজনৈতিক রং না দেখে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রীও। রবিবার ধৃতদের হাজির করানো হয় আদালতে। কাজল শাহ-সহ ৫ জনকে ৫ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি ১০ জনকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ফিরহাদের বীরভূম সফরের মধ্যেই শনিবার রাতে বাঁশজোড় এলাকায় খুন হন ফয়জল। বালিঘাটের দখলদারি নিয়ে বিবাদের জেরে ফয়জলকে ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে। বীরভূমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের গাফিলতির কথা মেনে নিয়েছেন ফিরহাদ। শনিবার রাতে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকেও তিনি বিষয়টি তোলেন বলে জানিয়েছেন। রবিবার সকালে সিউড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে ফয়জলের হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি পুলিশকে বলেছি রাতে, কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে হবে। যাতে মানুষ শান্তিতে থাকতে পারেন, আইনত বালি তোলা হয়, এ সব যাতে দ্রুত বন্ধ হয় সে কথা আমি বলেছি। এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-কে সকালে ফোন করেছিলাম। আমি সকালে বোমার আওয়াজ পেয়েছি। কে কার লোক, তা দেখতে দেখতে একটা জীবন চলে গেল। অপরাধীরা অপরাধীই। তারা কারও লোক নয়।’’
মূল অভিযুক্ত এক সময় কাজল শাহ তৃণমূলের তিলপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি স্থানীয় তৃণমূল নেতা। বেআইনি বালি খাদানের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়েছিল আগেই। পাশাপাশি, জেলাশাসকের বাড়িতে বোমাবাজি করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সেই কাজল শাহকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘‘যে অন্যায় করবে সে গ্রেফতার হবে। কে কাজল, তা দেখার দরকার নেই। আমি ব্যক্তির উপর বিশ্বাস করি না। আমি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। সকালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে, আমি বলেছি এখানে আরও পুলিশ নিয়োগ করুন।’’
অবৈধ বালি ব্যবসা নিয়ে ফিরহাদের বার্তা, ‘‘বেআইনি বালি খাদান সরকার চালাতে দেবে না। তৃণমূল বালিখাদান চালাতে উৎসাহ দেয় না।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ফিরহাদ। তাঁর যুক্তি, ‘‘এখন রাজ্যের যা অবস্থা তাতে সকলেই তৃণমূল বলে দাবি করে। কিন্তু যারা বেআইনি কাজ করে তারা তৃণমূল নয়। বালি খাদানের নামেও হয়তো তৃণমূলের নাম ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তৃণমূল এ সবকে প্রশ্রয় দেয় না।’’
ফয়জলের খুনের ঘটনায় কাজল শাহ-সহ ১৫ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে ডিআইজি শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘প্রধান অভিযুক্ত-সহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনও দুষ্কৃতীকে ছাড়া হবে না। তল্লাশি চলছে।’’ শনিবার রাতে বাঁশজোড় এলাকায় খুনের পর থেকে থমথমে এলাকা। সেখানে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।