প্রথম দু’ম্যাচ হেরেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে চলে গেল পাকিস্তান। ছবি: আইসিসি।
সোনার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তানকে হারালেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু শাকিব আল হাসানের দলকে হারিয়ে প্রতিযোগিতার শেষ চারে চলে গেলেন বাবর আজ়মরা। বাংলাদেশের ৮ উইকেটে ১২৭ রানের জবাবে ১১ বল বাকি থাকতেই পাকিস্তান তুলল ৫ উইকেটে ১২৮ রান।
টস জিতে দু’বার ভাবেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক শাকিব। প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন দুই ওপেনারই ছন্দে থাকায়। কিন্তু ভারতকে প্রায় হারিয়ে দেওয়া লিটন দাস অবশ্য বাবরদের বিরুদ্ধে সাফল্য পেলেন না। শুরুটা আগ্রাসী মেজাজে করেও ৮ বলে ১০ রান করে আউট হলেন শাহিন আফ্রিদির বলে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে। মারলেন একটি ছয়। উইকেটের অন্য প্রান্তে ভাল ব্যাট করলেন অন্য ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথম একাদশে ফেরাল সৌম্য সরকারকেও। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামলেন তিনি। দ্রুত প্রথম উইকেট হারানোর পর কিছুটা ধরে খেলার চেষ্টা করেন নাজমুল এবং সৌম্য। দ্রুত রান তোলার থেকেও দলের ইনিংসকে স্থিরতা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ১৭ বলে ২০ রান করে সৌম্য আউট হওয়ার পর নামেন অধিনায়ক শাকিব। কিন্তু বিতর্কিত সিদ্ধান্তে তাঁকে ফিরতে হল সাজঘরে। বল তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে পায়ে লাগলেও, তৃতীয় আম্পায়ার এলবিডব্লু দেন। মাঠের আম্পায়ার আউট দেওয়ায় রিভিউ নেন শাকিব। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত জানার পর ক্ষোভপ্রকাশ করেন শাকিব। মাঠ ছাড়তে চাইছিলেন না। আম্পায়ারদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত সাজঘরে ফেরেন। নাজমুল করেন ৪৮ বলে ৫৪ রান। নিজের ইনিংসটি সাজালেন সাতটি চারের সাহায্যে।
অধিনায়ক প্রথম বলেই বিতর্কিত ভাবে আউট হওয়ার পরেই মানসিক ধাক্কা খায় বাংলাদেশ শিবির। এই ধাক্কায় ধস নামে তাদের ইনিংসে। মোসাদ্দেক হোসেন (৫), নুরুল হাসান (শূন্য), তাসকিন আহমেদরা (১) কেউই দলকে ভরসা দিতে পারলেন না। কিছুটা চেষ্টা করলেন আফিফ হোসেন। কিন্তু উইকেটের অন্য প্রান্তে সঙ্গীর অভাবে তাঁর চেষ্টা ফলপ্রসূ হল না।
দুরন্ত বোলিং করলেন শাহিন। বাঁহাতি জোরে বোলার ২২ রানে ৪ উইকেট নিলেন। ৩০ রান দিয়ে ২ উইকেট সাদাব খানের। ইফতিকার আহমেদ ১৫ রানে ১ উইকেট এবং হ্যারিস রউফ ২১ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন।
জবাবে প্রত্যাশিত ছন্দে ব্যাট করলেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার বাবর এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ান। যদিও প্রথম ওভারেই তাসকিনের বলে রিজ়ওয়ানের দেওয়া সহজ ক্যাচ ফেলে দিলেন উইকেটরক্ষক নুরুল। তা না হলে পাকিস্তানকেও শুরুতেই চাপে ফেলতে পারত বাংলাদেশ। লক্ষ্য কম থাকায় বেশি ঝুঁকি নেননি পাক ব্যাটাররা। ইনিংসের প্রথম অর্ধে অর্থাৎ প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তান কোনও উইকেট না হারিয়ে ৫৬ রান করে। তাসকিন ছাড়াও কৃপণ বোলিং করলেন নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানরা। তাঁদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সুবাদে কম রানের পুঁজি নিয়েও ভাল লড়াই করল বাংলাদেশ।
পাকিস্তান প্রথম উইকেট হারায় ১১তম ওভারে। ৩৩ বলে ২৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক বাবর। চেনা ছন্দে না থাকা পাক অধিনায়ক ছিলেন একটু বেশিই সাবধানী। মাত্র দু’টি চার মারেন তিনি। পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন নাসুম। বাবর আউট হওয়ার পরের ওভারেই এবাদত হোসেনের বলে সাজঘরে ফিরলেন রিজ়ওয়ানও। পাক উইকেটরক্ষক-ব্যাটার করলেন ৩২ বলে ৩২ রান। দু’টি চার এবং একটি ছয় মারলেন তিনি। ব্যর্থ হলেন তিন নম্বরে নামা মোহাম্মদ নাওয়াজ় (৪)। লিটনের অনবদ্য ফিল্ডিংয়ে রানআউট হলেন তিনি। পাকিস্তানের মিডল অর্ডারকে টানলেন মহম্মদ হ্যারিস। ১৮ বলে ৩১ রান করলেন তিনি। মারলেন একটি চার এবং দু’টি ছয়। তাঁকে সঙ্গ দিলেন শান মাসুদও। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন তিনি। দু’টি চারের সাহায্যে ১৪ বলে ২৪ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি।
বাংলাদেশের নাসুম ১৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নিলেন। ৩৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নিলেন শাকিব। বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটারকেই মূল লক্ষ্য করেন পাক ব্যাটাররা। ২১ রান দিয়ে ১ উইকেট নিলেন মুস্তাফিজুর। ২৫ রানে ১ উইকেট এবাদতের।