কাজ নেই, তাই ছোটেন ভিন্ রাজ্যে

সে কাজ আবার প্রতিদিনের। সময়ও বাঁধা। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। মাসে ৫০০ টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে, ১০০-১৫০ টাকার খাওয়াদাওয়ার পরেও হাতে থাকে টাকা।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

নয়াগ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫৬
Share:

শ্রীনগর। —ফাইল চিত্র

ঘরে থাকলে একশো দিনের প্রকল্পে বছরে কাজ মেলে মেরেকেটে ১০ থেকে ১৫ দিন। তা বাবদ দিনে আয় ১৯১ টাকা। সেখানে কাশ্মীরে ঘাস-কাটা, ধান-কাটা, পশু চরানো, আপেল জমি কিংবা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের মতো কাজ করেও মেলে পাঁচশো থেকে ছ’শো টাকা। সে কাজ আবার প্রতিদিনের। সময়ও বাঁধা। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। মাসে ৫০০ টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে, ১০০-১৫০ টাকার খাওয়াদাওয়ার পরেও হাতে থাকে টাকা।

Advertisement

ফারাকটা এখানেই। তাই প্রাণের ঝুঁকি থাকার পরেও ওঁরা কাশ্মীরে কাজে যান। বছরখানেক আগেও বীরভূমের পাইকর থানার নয়াগ্রাম থেকে নানা বয়সের ৫০-৬০ জন নিয়ম করে কাশ্মীরে যেতেন। শুধু কাশ্মীর নয়, নানা কাজে যেতেন মুম্বই, ওড়িশাতেও। তবে কাশ্মীরের পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় ইদানীং সেখানে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু, সংসার, পেট যে বড় বালাই।

তবে, বাহালনগরের শ্রমিকদের যে ভাবে জঙ্গিদের গুলিতে খুন হতে হয়েছে এমনটা কোনও দিনই ঘটেনি বলে জানালেন কাশ্মীরে কাজ করা মিরাজউদ্দিন শেখ, আজম শেখরা। এলাকায় কাজের অভাব, গ্রামের বাড়িতে নিজস্ব চাষ জমি না থাকায় মিরাজউদ্দিন ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর কাশ্মীরে কাজ করতে গিয়েছেন।

Advertisement

বছর বাহান্নর মিরাজউদ্দিন জানালেন, নয়াগ্রাম ছাড়াও পাইকর থানার দাঁতুড়া, মিত্রপুর, বিলাশপুর, মুকলিশপুর, পাটাগাছি, রুদ্রনগরের মতো গ্রাম থেকে বছর খানেক আগেও আয়ের জন্য দলবেঁধে কাশ্মীরে কাজ করতে গিয়েছেন অনেকে। বেশির ভাগ বারামুলা জেলায় কাজ করতেন। কিন্তু, দিনের পর দিন কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতি জারি থাকায় কাজে গিয়ে আগের মতো স্বস্তি পেতেন না মিরাজউদ্দিন, আজমরা। সেই কারণে গত বছর ইদে বাড়ি ফিরে আর যাননি।

গ্রামের সাদরুল, রাফিকুল, মহম্মদ আবুল খায়ের, মাহারব শেখ, সদরুল, নঈমউদ্দিনরা অবশ্য রুটি-রুজির টানে কোনও কিছুর পরোয়া না করেই ছুটেছেন সেই কাশ্মীরে। মাহারব শেখ দশ বছর হল কাশ্মীরে কাজ করছেন। বাড়িতে স্ত্রী তিন ছেলে। স্ত্রী নাসিমা বিবি জানালেন, বাড়িতে চাষজমি নেই। স্বামীর রোজগারে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে দিলেও, ছোটটা এ বার মাধ্যমিক দেবে। এ সবের একমাত্র ভরসা স্বামীর রোজগার।

নয়াগ্রামের বাসিন্দা, স্থানীয় মিত্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের বাবুল আকতার জানালেন, একশো দিন প্রকল্পে আগে এলাকার মানুষ কাজ পেতেন। এখন অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না। এলাকায় খাস জমি, খাস পুকুরের অভাব আছে। সেই কারণে পুকুর খনন বা মাটি কাটার কাজও খুব কম হচ্ছে। বাবুলের কথায়, ‘‘নিকাশি নালা সংস্কারের সময় জবকার্ড আছে এমন শ্রমিকদের ১০ থেকে ১৫ দিন কাজ দিতে পারা গিয়েছে। ওই কাজের ভরসায় কে আর গ্রামে থাকবেন।’’

এলাকায় কাজের অভাব আছে সে কথা মানতে চায়নি প্রশাসন বা পঞ্চায়েত সমিতি। বিডিও (মুরারই ২) অমিতাভ বিশ্বাসের দাবি, ‘‘মিত্রপুর পঞ্চায়েতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ৩৭০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাই কাজের অভাব আছে এটা ঠিক নয়।’’ এলাকার একশো দিন প্রকল্পে বিভিন্ন কাজের তালিকা জমা দিতে বলে প্রধান এবং পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে সভা করেছেন বলেও জানিয়েছেন। তাঁর কতায়, ‘‘প্রকল্প জমা দিলেই আবার কাজ হবে।’’ মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের আবদুল হকের মতে, ‘‘বাড়তি আয়ের জন্য এলাকার অনেক শ্রমিক বাইরে যান এটা ঠিক। তবে এলাকায় কাজের অভাব আছে এ কথা তো ঠিক নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement