আধার কার্ডের দীর্ঘ লাইন। শনিবার পাইকরে। ছবি: তন্ময় দত্ত
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ভয় কতটা রয়েছে, তা টের পাওয়া যাচ্ছে আধার কার্ড সংশোধনীর জন্য লম্বা লাইন দেখেই। মুরারই ২ ব্লকের পাইকরের ডাকঘরের পক্ষ থেকে শনিবার সকাল দশটা থেকে আধার সংশোধন এবং নতুন আধার কার্ড তৈরির জন্য নাম লেখানো হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেই বিজ্ঞপ্তি দেখে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই নাম লেখানোর জন্য লাইন দেন বিভিন্ন গ্রামের মানুজন। সঙ্গে তাঁদের পরিবার। এই ঠান্ডায় শুক্রবার সারারাত খোলা আকাশের নীচে তাঁরা কাটিয়েছেন স্রেফ আধার কার্ডের ত্রুটি ঠিকঠাক করার আশায়।
বস্তুতি, জেলার সর্বত্রই আধার কার্ড সংশোধনী নিয়ে লম্বা লাইন চোখে পড়ছে। লাইন রাখা নিয়ে নানা অভিযোগও উঠছে। পাইকর ডাকঘরের ক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছে, ইট পেতে রেখে স্থানীয় কিছু লোক লাইন দিয়েছিল। ভোরের দিকে সেই লাইনের ইট বিক্রি হয়েছে দুশো টাকা করে। কিন্তু, প্রশাসনও সতর্ক ছিল এ বার। বিডিও (মুরারই ২) নিজে এবং পাইকর থানার পুলিশকর্মীরা রাত থেকেই লাইনের উপরে নজর রেখেছিলেন। রাতেই বিডিও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেন, ‘আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্লকের ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে আধার কেন্দ্র তৈরির জন্য আবেদন করা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সেগুলি চালু হয়ে যাবে।’ এই বিজ্ঞপ্তি শুক্রবার রাতেই ডাকঘর, বাসস্ট্যান্ড, আনাজ বাজার-সহ বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে দেওয়া হয়। শনিবার ভোর থেকে পাইকর ডাকঘর এলাকায় ও আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে প্রচারও চালানো হয় প্রশাসনের তরফে।
কিন্তু এ দিন সকাল থেকে লাইনের মধ্যে বিভিন্ন অশান্তি শুরু হয়। ১০টা নাগাদ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন। ধাক্কাধাক্কিও হয়। কাশিমনগর গ্রামের বাসিন্দা বাক্কার শেখ বলেন, ‘‘আমার বয়স ৭০ পেরিয়েছে। আমার আধার কার্ডে নামের ভুল আছে। দেশে এনআরসি হবে। সেই ভয়ে আমি নাম সংশোধনের জন্য শুক্রবার রাত থেকেই লাইন দিয়েছিলাম। লাইনের মধ্যে আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয়। মাটিতে পড়ে যাই।’’ তিনি জানান, কিছু মানুষ তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে যান। এখন হাঁটতে পারছেন না। পায়ে ভাল চোট পেয়েছেন। রাত থেকে লাইন দিয়েও আধার কার্ডের সংশোধনী করাতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ওই বৃদ্ধ। সঙ্গে টাকা না থাকায় পাইকর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে এলাকার মানুষই টোটোয় চাপিয়ে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পরে পুলিশ নিজে যাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের স্লিপ দিতে থাকে। এর পরে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়। ডাকঘর থেকে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক লাইন করা হয়। একটা সময় ডাকঘর থেকে লাইন ব্লক অফিস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যে দিকে তাকানো যায়, শুধু মানুষের মাথা। ডাকঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ২০০০ জনের নাম লেখানোর জন্য স্লিপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, রাত্রি থেকে প্রায় আট হাজার মানুষ লাইন দিয়েছিলেন। ফলে, যা হওয়ার, তাই হয়েছে।
বিডিও (মুরারই ২) অমিতাভ বিশ্বাস বলেন, ‘‘শুক্রবার রাত দু’টো পর্যন্ত আমাদের অফিসের আধিকারিক ও কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছিলেন। ইট দিয়ে লাইন দেওয়া এবং সেগুলি বিক্রির চক্রান্ত যারা করেছিল, তাদের আমরা কোনও অরাজকতা করতে দিইনি। পাইকর থানার পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। আমরা বিজ্ঞপ্তি ও মাইকে প্রচার চালিয়ে মানুষজন যেন আতঙ্কিত না হন, সেই বিষয়ে
নজর রেখেছি।’’