এমনই অবস্থা। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার প্রায় অর্ধেক জুড়ে ডাঁই হয়ে রয়েছে আবর্জনা। তা ঘাঁটছে শুয়োরের দল। কোথাও আবার মুখে ময়লা নিয়ে টানাটানি করছে কুকুরের দল। তার মধ্যে কোনও মতে নাকে-মুখে রুমাল চেপে পার হচ্ছেন পথচারীরা। নীলকুঠিডাঙা, বিটি সরকার রোড, এলএম ঘোষ স্ট্রিট, কোর্ট মোড়, জেলখানা মোড়, সাউথ লেক রোড, ভগৎ সিংহ মোড়-সহ প্রায় গোটা পুরুলিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকার ছবিটা কম-বেশি এমনই।
বকেয়া মাইনের দাবিতে পুরসভার অস্থায়ী সাফাই কর্মীদের ১১ দিন ধরে চলা কর্মবিরতির জেরে শহর জুড়ে সাফাইয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন সাফাই না হওয়ায় শহরের কোনও কোনও এলাকা কার্যত নরকের চেহারা নিয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। ওই কর্মীদের অভিযোগ, ফেব্রুয়ারি নিয়ে গত তিন মাসের মাইনে বকেয়া রয়েছে। কর্মীদের তরফে সরোজিৎ স্যামুয়েল বলেন, “আমাদের দাবি ছিল অন্তত দু’মাসের মাইনে মেটানো হোক। কিন্তু পুরসভা কেবলমাত্র ডিসেম্বরের মাইনেই দিয়েছে।” আরও এক মাসের মাইনে দেওয়া না পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে, দাবি ওই কর্মীদের।
পরের সপ্তাহের গোড়াতেই দোল। এ সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা পুরুলিয়ায় আসেন। মূলত অযোধ্যা পাহাড়, বড়ন্তি, গড়পঞ্চকোট, জয়চণ্ডীপাহাড়-সহ অন্য জায়গাগুলি পর্যটকদের গন্তব্য হলেও তাঁদের অনেককে শহর ছুঁয়েই যেতে হয়। তাঁদের কাছে জেলা সদরের এমন জঞ্জাল-চিত্র ভাল বার্তা পৌঁছে দেবে না, মত শহরবাসীর অনেকের।
ঘটনা হল, শহরের রাস্তায় রাস্তায় জমে থাকা আবর্জনা সরানোর জন্য শুক্রবার আন্দোলনকারী সাফাই কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল পুরসভা। পুরসভা সূত্রের খবর, বৈঠকে পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সাফাই কর্মীদের দ্রুত কাজে নামতে অনুরোধ জানানো হয়। তবে তাতে কাজ হয়নি। এমনকি, চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে দাবিমতো আরও এক মাসের মাইনে দিয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও শ্রমিকেরা তাতে রাজি হননি বলে দাবি। পুরসভার বিরোধী দল-নেতা, বিজেপির প্রদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শ্রমিকেরা কাজ করার পরে মাইনে দাবি করছেন। তাঁদের দাবি তো অযৌক্তিক নয়। আর অস্থায়ী শ্রমিকদের মাইনের সংস্থান তো পুরসভাকেই করতে হবে।” তাঁর টিপ্পনী, কর্মবিরতির জেরে শহরের একাধিক জায়গা কার্যত নরকের চেহারা নিয়েছে। বাইরে থেকে পর্যটকেরা এলে শহরের পুর-পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন।
পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, “অস্থায়ী কর্মীদের বেতনের ব্যবস্থা পুরসভাকেই করতে হয়। এ জন্য কোনও তহবিলের সহায়তা আমরা পাই না। কর্মীদের ডিসেম্বরের বেতন দেওয়া হয়েছে। আরও অনুরোধ করেছিলাম, আর এক মাসের বেতন এ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তাতেও তাঁরা রাজি নন।” তাঁর সংযোজন, “পুরুলিয়া শহরে আবর্জনা সংগ্রহের যে পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে ছিল, তাতে বদল আনা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ করা হচ্ছিল। রাস্তাঘাট, গলি পরিষ্কার হচ্ছিল। কিন্তু কর্মীদের একাংশ তা চান না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”
সরোজিতের দাবি, শুক্রবার বৈঠকের পরে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তবে তাঁরা আরও অন্তত এক মাসের মাইনে না পেলে কাজে যোগ দিতে রাজি নন।