বাঁকুড়া শহরে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
৫০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে অনেক আগে। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু পুরসভা প্লাস্টিক বন্ধে মাঝে মধ্যে সচেতনায় নামে। কিন্তু হাটে-বাজারে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২ অক্টোবর, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর দেড়শোতম জন্মবার্ষিকীর দিনটি ‘প্লাস্টিকমুক্ত ভারত’ হিসেবে পালনের জন্য দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যে (সিঙ্গল ইউজ়) রাশ টানতে বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু গাঁধী জয়ন্তীর আগের দিন, মঙ্গলবার দুই জেলার শহর থেকে গ্রামাঞ্চল ঘুরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধের তোড়জোড় বিশেষ নজরে এল না।
দুই জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, ২ অক্টোবর থেকে যে প্লাস্টিক বন্ধ করা হচ্ছে, সে মর্মে তাঁদের কাছে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। তাই কোনও মহলেই তৎপরতা নেই। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘কোনও নির্দেশ এসেছে বলে জানা নেই।’’ তবে প্লাস্টিক বন্ধের বিষয়টি ‘মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্প’-এর মধ্যেই পড়ে বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দীনেশচন্দ্র মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, শৌচাগার নির্মাণ। সেই কাজ শেষ করে আনার পরে এ বার গাঁধীজয়ন্তী থেকে প্লাস্টিক বন্ধে সচেতনতায় জোর দেব।’’
২০১৭ সালেই বাঁকুড়া শহরে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় পুরসভার তরফে। গোড়ার দিকে বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালাতে দেখা যায় পুরসভার কর্তাদের। শহরের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার ও থার্মোকলের থালা, বাটি বিক্রি প্রকাশ্যে বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস পরে পুরসভার সক্রিয়তা ‘কমতেই’ ফের হাতে-হাতে ঘুরতে থাকে প্লাস্টিক। নিকাশি নালা থেকে নদীতে জমতে থাকে প্লাস্টিক।
গত বছর নভেম্বর মাসে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সারা জেলায় প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। অভিযোগ, নির্দেশ দিলেও নজরদারি চালানো হয়নি। ফলে, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের গাঁধীজয়ন্তী থেকে প্লাস্টিক বন্ধের ডাকে কড়া পদক্ষেপের আশায় ছিলেন জেলার পরিবেশ সচেতন বাসিন্দারা। কিন্তু প্রশাসনের সক্রিয়তার অভাব দেখে তাঁরা হতাশ।
বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “আমাদের কাছে প্লাস্টিক বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকাই আসেনি। তাই এ নিয়ে বাজারে নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা এখনই নেই।”
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “বাঁকুড়া শহরে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আমরা নজরদারিও চালাচ্ছি। তবে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে সচেতন না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত অর্থে শহর প্লাস্টিক-মুক্ত হবে না।” শহরের ব্যবসায়ীদের বড় অংশই দাবি করেছেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হলে তাঁদের ক্ষতির কিছু নেই। ক্রেতাদের একটা বড় অংশই দোকানে ব্যাগ আনেন না বলে তাঁদের অনুরোধে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দিতে হয়।
পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ দিন ফলের ঠেলাগাড়ি, কিংবা খাবারের দোকান, মাছ-মাংসের দোকানেও অবাধে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে। মিস্টির দোকানে ব্যবহার হচ্ছে থার্মোকলের বাটি। দোকানে বিক্রির জন্য সাজানো রয়েছে প্লাস্টিকের গ্লাস, থার্মোকলের থালা। পুরুলিয়ার পোস্ট অফিস মোড়ের এক ফল বিক্রেতা শেখ জামির বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন। তা না হলে আমি প্লাস্টিকের ব্যাগ দেওয়া বন্ধ করলে লোকে অন্য ফলওয়ালার কাছে চলে যাবে।’’ স্বপন পাঠক নামে এক ক্রেতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্লাস্টিকের উপরে আমাদের নির্ভরতা বেড়ে গিয়েছে। এক দিনে এই অভ্যাস বদলাবে না।’’
পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খান ও ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার বলেন, ‘‘প্লাস্টিক বন্ধের ব্যাপারে পুরসভা আগেও সচেতনতা প্রচার করেছে। নতুন করে নির্দেশ পেলে পদক্ষেপ করব।’’