রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে হাউজ ফর অল প্রকল্প-সহ নানা তহবিল আটকে দেওয়ার অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ আগে হাই কোর্টে মামলা করেছেন ঝালদা পুরসভার কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধিরা। ওই পুরপ্রতিনিধিদের সিংহ ভাগ পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে দাবি করেছেন, ঝালদার উন্নয়নের স্বার্থেই তাঁদের দলবদল। কিন্তু হাউস ফর অল প্রকল্পের উপভোক্তারা টাকা না পেয়ে বর্ষায় চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তা দেখে শহরবাসীর একাংশের দাবি, পুরসভায় ক্ষমতার রং-বদল হয়ে যায়, কিন্তু পুরবাসীর যন্ত্রণা যায় না।
মামলার আবেদনকারী তথা ঝালদার প্রাক্তন উপপুরপ্রধান পূর্ণিমা কান্দুর অভিযোগ, ‘‘হাউজ ফর অল প্রকল্প-সহ বিভিন্ন তহবিলের টাকা রাজ্য সরকার আটকে দেওয়ায় অধিকাংশ বাড়ি প্রাপক কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেননি। কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে তাঁদের। সুবিচার পেতে আমরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।’’
সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘সমস্যার কথা পুরমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছি। শীঘ্রই ওই প্রকল্পের টাকা আসবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য পাঁচটি কিস্তিতে মোট ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তার মধ্যে ২৫ হাজার টাকা উপভোক্তাকে পুরসভায় জমা করতে হয়। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, উপভোক্তাকে আগে ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। তারপরে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার সরেজমিনে ঘর তৈরির জায়গা পরিদর্শন করবেন। বাড়ি তৈরির টাকা মিলবে কি না, তা নির্ভর করবে তাঁর রিপোর্টের উপরে।
শহরের কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখা যায়, হাউজ ফর অল প্রকল্পে টাকা দেওয়া অনেক উপভোক্তার বাড়ির কাজ থমকে। তাঁদের কেউ পুরনো বাড়ি ভেঙে ফেলে এখন ভাড়াবাড়িতে মাথা গুঁজেছেন। কেউ বা অর্ধনির্মিত ঘরের চারপাশে বাঁশের খুঁটি পুঁতে দড়িতে ত্রিপল বেঁধে তার নীচেই বাস করছেন। বর্ষায় ত্রিফল ফুটো হয়ে জল যেমন পড়ছে, তেমনই সাপখোপের ভয়ও রয়েছে। তাই অনেকেই এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন।
হাটতলার বাসিন্দা অঞ্জনা কান্দুর (সাউ) কথায়, ‘‘দু’কিস্তিতে এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা পাই। তাতে দেওয়াল অর্ধেক উঠেছে। বাকি কিস্তির টাকা না পাওয়ায় কাজ বন্ধ।’’ তাঁদের অসম্পূর্ণ বাড়ির অনেকখানি আগাছায় ঢাকা পড়েছে। সে দিকে তাকিয়ে অঞ্জনা বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, মাথার উপরে একটা ছাদ হবে। সেটাও আর হল না।’’ তাঁর ছেলে দশম শ্রেণির পড়ুয়া অমরের কথায়, ‘‘ঘুপচি ঘরে আলো কম ঢোকে। পড়াশোনা
করতে কষ্ট হয়।’’
৯ নম্বর ওয়ার্ডের অসিত দত্ত জানান, প্রথম কিস্তির ৪০ হাজার টাকা পেয়ে নতুন ঘর তৈরির জন্য পুরনো বাড়ি ভেঙে ফেলেন। এখন তিনি কপাল চাপড়াচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম কিস্তির ৪০ হাজার টাকাই শুধু পেয়েছি। পুরনো ঘরটাও ভেঙে দিলাম। কষ্টের টাকা খরচ করে ভাড়াবাড়িতে রয়েছি।’’ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাগর মোদকের দাবি, ‘‘এক কিস্তির টাকাও মেলেনি। এ দিকে তালিকায় নাম দেখে ধারদেনা করে বাড়ির কাজ শুরু করেছিলাম। এখন ঋণ মেটাতেও পারছি না, ঘরের কাজও থমকে।’’ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধি বিপ্লব কয়াল বলেন, ‘‘প্রকল্পের টাকা আটকে দেওয়ায় ওই পরিবারগুলি খুব কষ্টে রয়েছেন।’’
অভিযোগ, গত বছরের শেষের দিকে সুরেশ আগরওয়ালকে তৃণমূলের পুরপ্রধানের পদ থেকে অনাস্থা ভোটে কংগ্রেস সরানোর পরেই ওই প্রকল্পের টাকা ফেরত গিয়েছে। যদিও সুরেশের পাল্টা দাবি, ‘‘কোনও টাকা ফেরত যায়নি। ওরা কাজ করতে পারেনি বলে টাকা আসছে না।’’ রাজনৈতিক তরজা শুনতে নারাজ ভুক্তভোগীরা। তাঁদের দাবি, জটিলতা কাটিয়ে প্রশাসন তাঁদের মাথায় ছাদ তুলে দিক।