খননের শুরুতেই পড়ল বাধা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
উদ্ধারের পরে প্রত্নসামগ্রী নিয়ে এলাকাতেই সংগ্রহশালা তৈরি করতে হবে, এমনই দাবি তুলে প্রত্নতত্ত্বস্থল খননের কাজ বন্ধ করে দিলেন গ্রামবাসী। শুক্রবার পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের হড়কতোড় গ্রামের ঘটনা।
শুক্রবার থেকে সেখানে খনন শুরু করেছিল রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার। ওই দলের নেতৃত্বে থাকা বরিষ্ঠ প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকাশচন্দ্র মাইতি বলেন, ‘‘স্থানীয় লোকজনের আপত্তিতে আপাতত হড়কতোড়া মৌজায় খনন কাজ বন্ধ করতে হয়েছে। পাড়ার বিডিওকে জানিয়েছি।” বিডিও (পাড়া) গৌতম মণ্ডল বলেন, ‘‘খননকারী দলের সদস্য ও গ্রামবাসীর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করব।”
পাড়া ব্লক সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দুরে হড়কতোড়া গ্রামেই আছে দেউলভিড়া নামের রাজ্য সরকারের সংরক্ষিত ওই প্রত্নতত্ত্বস্থল। কমবেশি এক বিঘা জমি জুড়ে একটি ঢিপির উপরে ছড়িয়েছিটিয়ে ছিল প্রচুর মাটির শিবলিঙ্গ, খোদাই করা পাথর, প্রাচীন ইট প্রভৃতি। ঢিপি থেকে পাওয়া গিয়েছে ছ’টি অতি প্রাচীন পাথরের মূর্তি। সেগুলি গ্রামের বাসিন্দারা সংরক্ষিত করে রেখেছেন পাশের একটি মন্দিরে।
লোকগবেষকদের একাংশের মতে, দেউলভিড়ার নিদর্শনগুলি সম্ভবত নবম-দশম শতাব্দীর। পুরুলিয়ার লোক গবেষক সুভাষ রায়ের মতে, ‘‘দেউলভিড়া ছিল জৈন ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থল। দেউলভিড়াতে পাওয়া মূর্তিগুলির একটি জৈন তীর্থঙ্কর ঋষভনাথের, বাকিগুলি সম্ভবত জৈন তীর্থঙ্করদের শাসন দেবদেবীর মূর্তি।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই প্রত্নতত্ত্বস্থলে খনন করতে চেয়ে রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার অনুমতি চায় কেন্দ্রের পুরাতত্ত্ব সর্বক্ষণের কাছে। গত বছরেই হড়কতোড়া মৌজায় খননের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণের জেরে সে কাজ সম্ভব হয়নি। এ বার ফের অনুমতি পেয়ে কাজ করতে এসেছেন পুরাতাত্ত্বিকেরা।
এ ব্যাপারে জুলাই মাসের শেষ দিকে প্রশাসনের সাহয্য চেয়ে পাড়া ব্লক প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয়ের অধিকর্তা। বুধবার খননকারী দলের সদস্যেরা দেউলভিড়ায় এসে সমীক্ষা-সহ অন্য কাজ মেটান। শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ ওই দলের আট জন সদস্য ঢিপিতে খোঁড়াখুড়ির প্রাথমিক কাজ শুরু করার পরেই গ্রামবাসীর একাংশ উপস্থিত হয়ে তাঁদের বাধা দেন বলে অভিযোগ। দাবি করা হয়, খোঁড়াখুড়ি করে পাওয়া দেবদেবীর মূর্তি, শিবলিঙ্গ গ্রাম থেকে নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। গ্রামবাসীর মধ্যে উমাপদ মিশ্র, দয়াল মিশ্রেরা দাবি করেন, ‘‘প্রত্ন সামগ্রী নিয়ে আমাদের গ্রামেই সংগ্রহশালা তৈরি করতে হবে। এ ব্যাপারে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত খননকাজ বন্ধ রাখতে হবে।’’ হড়কতোড়ের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের পাড়া ব্লকের সহ-সভাপতি প্রকাশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামবাসীর দাবি প্রশাসনকে জানাব।’’
দেউলভিড়া থেকে প্রাপ্ত পুরাকীর্তি এলাকাতেই সংগ্রহশালা করে রাখা হোক বলে দাবি করছেন লোক গবেষক সুভাষবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘খননকাজ বন্ধ করা সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু পুরুলিয়ার সুইসা ও পাকবিড়রায় যে ভাবে সংগ্রহশালা তৈরি করে পুরাকীর্তিগুলি রাখা হয়েছে, একই ভাবে দেউলভিড়াতেও তা করা হোক।’’
খননকারী দলের বক্তব্য, এ বিষয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। তবে এ বার খননকাজ বন্ধ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে হড়কতোড়ে খননের অনুমতি পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তাঁদের।