ক্ষোভ: পুরুলিয়ায় জাতীয় সড়কে অবরোধ। নিজস্ব চিত্র
গ্রীষ্মকাল এখনও শুরু হয়নি। এরই মধ্যে জলের অভাব শুরু হয়েছে পুরুলিয়া শহরে। আর সেই ক্ষোভে শুরু হয়ে গেল রাস্তা অবরোধ। শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধু রোড বাই লেন এলাকায় পানীয় জল মিলছে না এই অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার ওই এলাকার বাসিন্দারা পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন। ব্যস্ত রাস্তায় অবরোধের জেরে সার সার গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। ভোগান্তির শিকার হলেন বাস ও গাড়িতে আটকে পড়া যাত্রীরা।
জল সঙ্কট মেটাতে পুরসভা ও প্রশাসন নির্বিকার— এই অভিযোগ তুলে এ দিন এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা হাঁড়ি, বালতি ইত্যাদি নিয়ে রাস্তা অবরোধ শুরু করেন। অবরোধকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন মহিলা। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট চলছে, অথচ পুরসভার হেলদোল নেই। এতদিন কুয়ো বা নলকূপের জলে কোনওরকমে তৃষ্ণা মিটলেও গরম পড়তেই সে সব শুকোতে শুরু করেছে। চাঁপা বাউরি, শ্যামা বাউরি, কালী বাউরি প্রমুখের বক্তব্য, ‘‘দেড়-দু’কিলোমিটার দূরের সেই রাঁচি রোড থেকে পানীয় জল নিয়ে আসতে হচ্ছে।’’
কয়েকজন পুলিশ কর্মী এসে অবরোধ তোলার অনুরোধ জানালেও তাঁরা কানেই তোলেননি। তৃণমূলের শহর কমিটির সভাপতি তথা পুরসভার দুই চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল বৈদ্যনাথ মণ্ডল, কৃষ্ণেন্দু মাহালি এবং তৃণমূল কাউন্সিলর দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ও বোঝানোর চেষ্টা করেন। তাঁদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ কেউ বলতে থাকেন, ‘‘আমরা যখন কষ্ট করে জলের জন্য পুরসভায় ঘোরাঘুরি করি, তখন সমস্যা মেটাতে তো কেউ এগিয়ে আসেন না!’’
কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘গরম কালে পুরুলিয়ার জলসমস্যা নতুন কিছু নয়। তবে ওই এলাকায় কী ভাবে সমস্যার সমাধান হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁরা তো কথাই বলতে চাইলেন না।’’ এলাকার সিপিএম কাউন্সিলর মিতা চৌধুরী আবার অভিযোগ করছেন, ‘‘আমি এই সমস্যার কথা পুরসভায় অনেকবারই বলেছি। কিন্তু কাজ হয়নি।’’
অবরোধকারীরা দাবি করেন, প্রশাসনের কোনও আধিকারিক এলে শুধু তাঁর সঙ্গেই আলোচনা করবেন তাঁরা। এ দিকে, ততক্ষণে বাড়তে বাড়তে গাড়ির সারি আরও দীর্ঘ হয়েছে। গরমে বাসের মধ্যে নাতি শাহাজাহান আনসারিকে নিয়ে আটকে ছিলেন অসহায় আয়েষা বিবি। পুরুলিয়া মফস্সল থানার চাষরোড সিন্দরি থেকে হুড়ার লালপুরে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়ে কী লাভ? আমরা তো জল পৌঁছে দিতে পারব না।’’ দুর্গাপুরগামী একটি বাসে আটকা পড়েছিলেন মমতা গুঁই। তিনিও বলেন, ‘‘গরমে বাসের মধ্যে যেন সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আমাদের কষ্ট কী কারও চোখে পড়ে না?’’
জেলা পরিবহণ আধিকারিক অনির্বাণ সোম এসে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলার পরে বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধ দুপুর আড়াইটে নাগাদ ওঠে। অনির্বাণবাবু বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের জলের সমস্যার কথা প্রশাসনকে জানাব। পুরসভার সঙ্গেও কথা বলা হবে।’’
পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘শীঘ্রই আমরা গভীর নলকূপ বসিয়ে জল সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি। যদি এই এলাকায় জলের উৎস না মেলে, তাহলে পাশের কোনও এলাকায় জলের উৎসের অনুসন্ধান করা হবে।’’