ছবি: সংগৃহীত
বর্ধমান মেডিক্যাল থেকে এক রোগিণী নিখোঁজের অভিযোগ তুলে সুর চড়াল বিজেপি। শনিবার বিকেলে সিউড়ির ডাঙ্গালপাড়ায় বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে বীরভূমের বাসিন্দা ওই রোগিণীর পরিজনকে পাশে রেখে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে রোগিণীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশারই প্রমাণ। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপির রাজনীতিতে করোনা-পরিস্থিতিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল ভাঙবে।
ওই রোগিণীর পরিজনদের দাবি, সাঁইথিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলাকে অসুস্থতার জন্য ১৭ এপ্রিল বোলপুরের সিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করা হন। পরের দিনই তাঁকে বোলপুর থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। বর্ধমান মেডিক্যাল থেকে তাঁকে সেখানকার কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে পরিজনদের বলা হয়, রোগিণীকে সেখানে ১৪ দিন রাখতে হবে। তাই তাঁর পরিজনেরা রোগিণীকে রেখে বাড়ি ফিরে আসেন।
রোগিণীর ছেলের দাবি, ‘‘১৪ দিন পরে, মে মাসের গোড়ায় আমরা বর্ধমানের কোভিড হাসপাতালে গেলে তাঁদের বলা হয়, করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় ২৩ এপ্রিল ওই রোগিণীকে পুনরায় বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছিল। তা জেনে ওই দিনই বর্ধমান মেডিক্যালে গেলে সেখান থেকে বলে দেওয়া হয়, এমন কোনও রোগী ওখানে নেই।’’ এই খবর শুনে দিশেহারা হয়ে পড়েন তাঁরা। এর পরে কোভিড হাসপাতাল থেকে রোগিণীকে পাঠানোর নথি সংগ্রহ করে ফের বর্ধমান মেডিক্যালে যান বলে জানান রোগিণীর ছেলে। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালে তাঁদের কাছে কয়েক দিন সময় চাওয়া হয় বলেও রোগিণীর পরিজনেদের দাবি। এর পরেও রোগিণীর খোঁজ না মেলায় ২৬ মে তাঁরা বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। রোগিণীর ছেলের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতাল, থানা, সব জায়গা থেকে বারবার সময় চাওয়া হয়েছে। এক মাস পেরিয়ে গেলেও মায়ের খোঁজ পাইনি।’’
এ দিন ওই রোগিণীর পরিজনদের পাশে বসিয়ে শ্যামাপদবাবু বলেন, ‘‘ওই রোগিণীর কী হয়েছে, তিনি কোথায় কী অবস্থায় আছেন, এই ভেবেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। এমনই অবস্থা এই সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার। প্রকৃত সত্য জনসমক্ষে তুলে ধরা হোক।’’ জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘এক জন রোগীর বিষয়ে তথ্য স্বাস্থ্য প্রশাসনই দিতে পারে। তবে করোনা আক্রান্তদের নিয়ে রাজ্য সরকার মানবিক মুখ দেখিয়েছে এবং প্রশাসন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, বিজেপির নোংরা রাজনীতিতে তাঁদের মনোবল ভাঙবে।’’
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার কুণালকান্তি দে শনিবার বলেন, ‘‘ঘটনাটি কয়েক দিনের পুরনো। পুলিশকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে।’’ বর্ধমান থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, বর্ধমান মেডিক্যালে টিকিট করানোর পরে ওই মহিলাকে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেখানে যাননি। পরিজনেরা নিখোঁজ ডায়েরি করেন ঘটনার কয়েক দিন পরে। তার পরে তদন্তে নামা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত মহিলার কোনও খোঁজ মেলেনি। বর্ধমান থানার তদন্তকারী এক অফিসার জানান, শুক্রবারও মহিলার ছেলের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সম্ভাব্য সমস্ত জায়গায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।