মাড়গ্রামে শিশুমৃত্যু নিয়ে উদ্বেগে এলাকার বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র
উপসর্গ এক। বমি, পেটব্যথা। বাসস্থান এক। ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা মৃত্যুর কারণও এক। বারো দিনের মধ্যেই এমন তিন মৃত্যুতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে মাড়গ্রাম ১ পঞ্চায়েতের এঁটালোপাড়ায়। রামপুরহাট ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ রায়চৌধুরী জানান, সঠিক কী কারণে মৃত্যু হয়েছে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকায় একই উপসর্গ নিয়ে আরও ৬ জন শিশূ আক্রান্ত। তাদের মধ্যে একজন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিদের বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে বিশেষ মেডিক্যাল টিম পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে বলে জানান অভিজিৎবাবু।
স্থানীয় ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় মাড়গ্রাম ১ পঞ্চায়েতের এঁটালোপাড়ার চার বছরের শিশু আহিল শেখ। বর্ধমান মেডিক্যালে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয় ‘সেপসিস উইথ শক’। রবিবার সকালে আহিলের যাওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়ায়। জানা যায়, ওই একই পাড়ার দু’জনের একই উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে গত বারো দিনে।
১৫ জুলাই রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই এঁটালোপাড়ারই নইম শেখ নামে ছ’বছরের এক বালক মারা গিয়েছিল। তারও বমি ও হালকা পেট ব্যথা ছিল। নইমের মৃত্যুর কারণ হিসেবেও ডেথ সার্টিফিকেটে ‘সেপসিস’ উল্লেখ করা হয়। ৬ জুলাই সকালে রামপুরহাট মেডিক্যালে মারা যায় এঁটালোপাড়ারই ১৩ বছরের আসাদুল শেখ। আসাদুলের মৃত্যুর কারণ হিসেবেও ডেথ সার্টিফিকেটে ‘সেপসিস’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
আহিলের মা রেবিকাম খাতুন জানান, শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ তাঁর ছেলে তিন-চার বার বমি করে। বমি ও হালকা পেট ব্যথার উপসর্গ নিয়ে তাকে প্রথমে বসোয়াতে রামপুরহাট ২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রামপুরহাট মেডিক্যাল ও রাতে বর্ধমান মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়। গভীর রাতে মৃত্যু হয় আহিলের। নইমের মা মুজিবা বিবি জানান, তাঁর ছেলেরও বমি ও হালকা পেট ব্যথা ছিল। রামপুরহাট মেডিক্যালে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় ছেলের। আসাদুল শেখের মা নার্গিসা বিবি জানান, সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাঁর ছেলে বমি করছিল। বমির সঙ্গে হালকা পেট ব্যথা ছিল। হাসপাতালে ভর্তি করার পরে চিকিৎসা চলাকালীণ এক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায় আসাদুল।
বারো দিনের ব্যবধানে একই পাড়ায় একই উপসর্গ নিয়ে তিনটি মৃত্যুতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়ায়। এলাকার বাসিন্দা, জেলা তৃণমূলের মহিলা সভানেত্রী সাহারা মণ্ডল বলেন, ‘‘করোনা আবহে এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বাসিন্দারা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে পাড়ায় থাকতে চাইছেন না। অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমি দলের রাজ্য সভানেত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। দলের জেলা সহ-সভাপতি তথা জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিত সিংহের সঙ্গেও কথা বলেছি। কী কারণে এই ঘটনা তা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা দেখছেন।’’
রামপুরহাট ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ রায়চৌধুরী জানান, জলবাহিত কোনও রোগের কারণে মৃত্যু হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে জল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। খাদ্য সংক্রমণ জনিত কারণে হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্য জেলার ফুড সেফটি অফিসারকেও এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
মাড়গ্রাম ১ পঞ্চায়েতের প্রধান মহবুল আলি (ভুট্টো) জানান, শুক্রবার এলাকায় ১৩১ জনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এখনও রিপোর্ট এসে পৌঁছয়নি। এ দিন দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দা তথা এলাকার বিধায়ক মিল্টন রসিদ এলাকায় যান।