রামপুরহাটে বামফ্রন্টের মিছিল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
আবাস যোজনায় বাড়ি নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরগরম জেলা। সোমবার জেলার নানা জায়গায় এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপি, সিপিএম। দেওয়া হল স্মারকলিপিও। তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘এত দিন ধরে যখন আবাস যোজনার টাকা আটকে ছিল, তখন ওদের মুখ দিয়ে কোনও কথা বের হয়নি বা দাবিও জানানো হয়নি। আজ যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গরীব মানুষরা বাড়ি নির্মাণের জন্য টাকা পাচ্ছে, তখন ওরা পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।’’ এতে কোনও লাভ হবে না বলেও মলয়ের দাবি করেন।
এ দিন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার পক্ষ থেকে জেলার বিভিন্ন ব্লকে অবস্থান বিক্ষোভ-সহ সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি পালন করা হয়। ওইকর্মসূচির অংশ হিসেবে দলের বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা নলহাটি ১ ব্লক অফিসে যান। খয়রাশোল এবং দুবরাজপুরে উপস্থিত ছিলেন জেলায় দলের একমাত্র বিধায়ক অনুপ সাহা। সিউড়ি ১ ব্লক, রামপুরহাট ১ ব্লক, লাভপুর, সাঁইথিয়া ব্লকেও বিজেপির পক্ষ থেকে আবাস যোজনা নিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বিজেপির দাবি, খয়রাশোল এবং দুবরাজপুর দুই ব্লকে হাজার তিনেক করে কর্মী, সমর্থক আর নলহাটি ১ ব্লকে প্রায় এক হাজার কর্মী, সমর্থক কর্মীসূচিতে যোগ দেন।
ধ্রুবের অভিযোগ, ‘‘আবাস যোজনায় তালিকায় প্রকৃত প্রাপকদের নাম নেই। তৃণমূল নেতা, যাঁদের পাকা বাড়ি আছে, তাঁদের নাম তালিকায় আছে। উপভোক্তাদের প্রকৃত তালিকা পঞ্চায়েত এলাকায় প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে না। এরই প্রতিবাদে এ দিন জেলার বিভিন্ন ব্লকে বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’’ নলহাটি ১ ব্লকের স্মারকলিপি প্রদানের নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে বিডিও না থাকায় বিজেপি কর্মীরা ক্ষোভে ব্লক অফিসের গেট বন্ধ করে দেয়। বিডিও আসার পরে গেট খুলে দিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয় বিজেপি কর্মীরা। বিডিও (নলহাটি ১ ব্লক) মধুমিতা ঘোষ বলেন, ‘‘আবাস যোজনার সমীক্ষার কাজে বিভিন্ন গ্রামে যেতে হচ্ছে। তাই ছিলাম না। দাবির বিষয়গুলি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’’ একই আশ্বাস দেন রামপুরহাট, লাভপুর, সাঁইথিয়া, সিউড়ি-১, দুবরাজপুর এবং খয়রাশোল ব্লকের বিডিওরা।
সোমবার বিকেলে আবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়া নিয়ে একটি মিছিলের আয়োজন করে বিজেপি। বেলা তিনটে নাগাদ মহম্মদবাজারের আঙ্গারগড়িয়ায় দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল করে কর্মী সমর্থকেরা হাজির হন ব্লক অফিসের সামনে। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মণ্ডল সভাপতি তারাপদবাবু বলেন, ‘‘যাঁরা প্রকৃত উপভোক্তা তাঁদেরই নাম নেই। এটা বিজেপি মেনে নেবে না। প্রকৃত উপভোক্তা বঞ্চিত হলে আগামী দিনে ব্লক অফিসের সামনে টায়ারের পর টায়ার জ্বলবে, গাড়ির পর গাড়ি জ্বলবে, অফিস ভাঙচুর হবে এবং বিডিও’র চেয়ারও ভাঙচুর হবে।’’
যদিও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তাপস সিংহ বলেন, ‘‘কেন্দ্র বাড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। সেই ভিত্তিতেই রাজ্য সমীক্ষা করছে। এতে যাঁরা সত্যি বাড়ি পাওয়ার যোগ্য তাঁরাই পাবেন। নিয়ম মেনেই ব্লক প্রশাসন কাজ করছে। আর কেউ যদি সরকারি সম্পত্তি ভাঙার পদক্ষেপ করে তাহলে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোন রাজনৈতিক নেতা কী বলছেন সেটা বিবেচ্য নয়। যদি কেউ এই ধরনের কাজ করে তাহলে প্রশাসনিক ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
অন্য দিকে, বীরভূম জেলা বামফ্রণ্টের পক্ষ থেকেও আবাস যোজনায় প্রকৃত প্রাপকদের তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করার দাবি-সহ বিভিন্ন দাবিতে রামপুরহাট মহকুমা শাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। স্মারকলিপি প্রদানের আগে রামপুরহাট শহরের পাঁচমাথা মোড়ে জমায়েত ও শহরে মিছিল করেন বামফ্রন্টের কর্মী, সমর্থকেরা। উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায়-সহ জেলার অন্য নেতারা। মিছিলে মানুষের মতামতের ভিত্তিতে আবাস যোজনার অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরির দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সমীক্ষার কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং সমীক্ষার কাজে পুলিশকে যুক্ত করে পঞ্চায়েতের প্রশাসনিক অধিকারদের ক্ষমতা খর্ব করা চলবে না বলে দাবি জানান বাম নেতৃত্ব।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘আবাস যোজনা প্রকল্পে যে টাকা এসেছে তা প্রকৃত উপভোক্তাদের গৃহ নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়। কারণ, যে ভাবে আবাস যোজনা প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে তা তাতে শাসকদলের ডুবে যাওয়া উচিত। প্রকৃত প্রাপকদের খসড়া তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়ে এসডিও এবং বিভিন্ন ব্লকে দলের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।’’