উদ্ধার হয়েছে এই বোমাগুলি। নিজস্ব চিত্র
যখন কোনও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে তখনই কি বোমা বন্দুক উদ্ধারের কথা মনে পড়ে পুলিশের? সম্প্রতি বীরভূমে একের পর এক জায়গায় বোমা উদ্ধারের ঘটনায় এই প্রশ্নই তুলছে বিরোধীরা। তাদের দাবি, অনেকটাই পুলিশের ‘নাটক’। শাসক দল তৃণমূলের পাল্টা দাবি, পুলিশ নিজের মতো অস্ত্র উদ্ধারের কাজ চালিয়ে থাকে।
সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ পরে বজবজের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ নিয়ে চর্চায় ছিল রাজ্য। সেই আবহে গত সোমবার ভরদুপুরে মজুত বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে দুবরাজপুরের পদুমা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোড়াপাড়া। অভিযোগ, মজুত রাখা বোমা বিস্ফোরণে উড়ে যায় স্থানীয় তৃণমূল কর্মী শেখ সফিকদের বাড়ির সিঁড়িঘরের একাংশ। কেন, কীভাবে মজুত বোমা ফেটে বিস্ফোরণ ঘটে তার উত্তর পাওয়া বাকি। কিন্তু তারপর থেকেই নিয়ম করে বোমা উদ্ধার হয়ে চলেছে জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায়। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, পুলিশ তৎপর আছে বলেই বোমা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে ও হচ্ছে।
পুলিশের তথ্য বলছে, ২২ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে ক’য়েকশো বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। বোমা উদ্ধার হয়েছে বোলপুরের বাহিরি পাঁচশোয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকার একটি পুকুরের পাড়ে, কাঁকরতলা থানার সাহাপুরে ইসিএলের পরিত্যক্ত ঘরে, লোকপুরের বারাবন জঙ্গলে, রামপুরহাট থানার নারায়ণপুর যাওয়ার আগে ঝোপের মধ্যে। বোমা পাওয়া গিয়েছে কামাক্ষা যাওয়ার রাস্তায় কালভার্টের নীচে, মাড়গ্রামের লতিপাড়া, তারাপীঠের নুরুদ্ধিপুরে পরিত্যক্ত জায়গায়। সাঁইথিয়ায় উদ্ধার হয়েছে প্রচুর তাজা বোমা। বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘‘রাতারাতি এত তাজা বোমা ঝোপে জঙ্গলে রাখছে কে? বোমা উদ্ধার দেখাতে সাজিয়ে বোমা রাখা হচ্ছে না তো?’’
শনি ও রবিবারও জেলার একাধিক জায়গায় বোমা উদ্ধার হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় মল্লারপুর থানার জবুনি গ্রামে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে বোমা উদ্ধার করে রবিবার গ্রামের ফাঁকা মাঠে বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করা হয়। মাড়গ্রামের লতিপাড়া এলাকায় পরিত্যক্ত জায়গা থেকে বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। রবিবার সেই বোমাগুলিও নিষ্ক্রিয় করা হয়। পাইকর থানার পঞ্চহড় গ্রামের কাছে একটি সেতুর নীচে প্লাস্টিকের ছোট ড্রামে তাজা বোমা উদ্ধার হয়।
গত বছরও এমন তৎপরতা দেখা গিয়েছিল বগটুই কাণ্ডের পর। ঘটনার একদজিন পর ওই গ্রামে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর পুলিশ কর্তাদের নির্দেশ দেন, রাজ্যে যেখানে যত বেআইনি অস্ত্র, বোমা রয়েছে, অবিলম্বে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে সাত দিনের মধ্যে তার সমস্ত বাজেয়াপ্ত করতে। তারপরই একই ভাবে জেলায় পুলিশি ততপরতা নজরে এসেছিল। দিন সাতেকের মধ্যে মাড়গ্রাম, দুবরাজপুর, সদাইপুর, লাভপুর , খয়রাশোল, লোকপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় শয়ে শয়ে বোমা উদ্ধার হয়েছিল। সবই মাঠ ঘাট ঝোপ জঙ্গল থেকে। ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রীর বীরভূম সফরেও মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কর্তাদের নির্দেশ দেন, ‘‘বোমার কারখানা এখানে চলবে না। যা অস্ত্র আছে উদ্ধার করুন।’’ তখনও সমান সক্রিয় হয়েছিল পুলিশ। সে বার শুধু খয়রাশোলের বড়রা গ্রামের একটু পুকুর পাড়ে কৃষি জমিতে পুঁতে রাখা ৪ জ্যারিক্যান ভর্তি ২০০ বোমা উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
এ বারেও এমন তৎপরতাকে কটাক্ষ করছে বিরোধী শিবির। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, বীরভূমের পাড়ায় পাড়ায় প্রচুর বোমা এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম মজুত আছে । এবং সেটা পুলিশের অজানা নয়। যখন মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন বা কোনও ঘটনা ঘটে তখন পুলিশ একটা অংশ উদ্ধারে সক্রিয়তা দেখায়। দুষ্কৃতীদের বলা হয় বোমা সরিয়ে ফেল। তারই প্রতিফলন মাঠ, ঘাট জঙ্গল থেকে এত সংখ্যক বোমা উদ্ধার হওয়া।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, ‘‘বীরভূমের পাড়ায় পাড়ায় প্রচুর বোমা এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম মজুত আছে। সেটা পুলিশের অজানা নয়। যখনই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন বা কোনও ঘটনা ঘটে তখন পুলিশ একটা অংশ উদ্ধারে সক্রিয়তা দেখায়। দুষ্কৃতীদের বলা হয় বোমা সরিয়ে ফেলতে।’’ বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলছেন, ‘‘এটা পুলিশের নাটক। প্রশাসন সচল আছে দেখিয়ে যাতে তৃণমূল নেতারা আরও বেশি বোমা মজুত করতে পারেন তার ব্যবস্থা করে দেওয়া।’’
বীরভূমের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘প্রায়ই তাজা বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করছে ঠিকই। কিন্তু ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বিরোধীরা, বিশেষত বিজেপি। তারাই দুষ্কৃতীদের উস্কে এখানে-সেখানে বোমা রেখে পুলিশকে খবর দিচ্ছে। গোটা রাজ্য জুড়ে এই ষড়যন্ত্র চালিয়ে রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে।’’