পুলিশের সঙ্গে কথা বলছেন বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র।
নার্সিং প্রশিক্ষণের পর ছাত্রীদের চাকরির নামে পাঠানো হচ্ছিল 'বাজে' জায়গায়। সেখানে রোগী তো নেই-ই, বদলে কখনও মত্তদের আড্ডায় কখনও কুপ্রস্তাবের মুখে পড়তে হচ্ছিল বলে তাঁদের অভিযোগ। বার বার এমন হেনস্থার শিকার হয়ে বিরক্ত ছাত্রছাত্রীরা তাই ওই বেসরকারি নার্সিং প্রশিক্ষণ স্কুলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলনে নামলেন। তাঁদের দাবি, রোগীর সেবা করার জন্য নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। নার্সিংহোমে ভাল চাকরির প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। বদলে ফি হিসেবে ৫৩ হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই টাকা ফেরত দিতে হবে।
বীরভূমে সিউড়ি সদর হাসপাতালের পাশেই ওই বেসরকারি নার্সিং প্রশিক্ষণের স্কুল। বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি পেলেও প্রশিক্ষণ শেষে নার্সিংহোমে চাকরি হয়নি তাঁদের। উল্টে কাজের নামে রাঁধুনি, নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব দিয়ে তাঁদের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে।
এরই মধ্যে প্রিয়া মণ্ডল নামে এক ছাত্রীকে বেসরকারি নার্সিংহোমে পাঠানো হচ্ছে জানিয়ে বর্ধমানের মশাগ্রামে যেতে বলা হয়েছিল। সেখানে গিয়েই ‘অদ্ভুত’ অভিজ্ঞতা হয় প্রিয়ার। তাঁর কথায়, “যে ঠিকানায় যেতে বলা হয়েছিল, সেটি আদৌ নার্সিংহোম নয়। নির্জন জায়গায় একটি দোতলা বাড়িতে চার থেকে পাঁচজন যুবক মদ্যপান করছিল। সেখানে যেতেই আমাকে কু প্রস্তাব দেওয়া হয়।” রাজি না হওয়ায় অপহরণের চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ প্রিয়ার।
অনুশ্রী বাগদি নামে এক ছাত্রী এই প্রসঙ্গে জানান, চাকরির নাম করে বিভিন্ন বাজে জায়গায় পাঠানো হচ্ছে তাঁদের। যেখানে গেলে তাদের কুপ্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে ভয়, হুমকি বা প্রলোভন দেখিয়ে রাজি করার চেষ্টাও হচ্ছে। এছাড়া নার্সিং প্রশিক্ষণের পরও তাঁদের পাঠানো হচ্ছে নিরাপত্তারক্ষী বা রাঁধুনির কাজে। নার্সিং স্কুল কর্তৃপক্ষের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই তাই বিক্ষোভের পথে নেমেছেন ছাত্রছাত্রীরা।
বুধবার বিক্ষোভস্থলে আসে সিউড়ি থানার পুলিশ। ছাত্রছাত্রীরা জানান, কর্তৃপক্ষ তাঁদের টাকা অবিলম্বে ফেরত না দিলে আইনের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য ছাত্রছাত্রীদের আনা দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। এক কর্তার দাবি, “আগেও আমরা ভালো জায়গায় ছাত্র-ছাত্রীদের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখন করোনা আবহে আমরা এই কাজ বন্ধ রেখেছিলাম, নতুন করে আবার শুরু করছি। বিভিন্ন নার্সিংহোমে সঙ্গে কথা বলছি, কিছুদিনের মধ্যেই ভাল চাকরি পাবে ছাত্রছাত্রীরা।”