মিলছে না কেন্দ্রীয় ভাতা, সঙ্কটে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী

বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খান জানাচ্ছেন, বৃদ্ধ শিল্পীর এমন অবস্থার কথা জানা ছিল না তাঁর।

Advertisement

অভিজিৎ অধিকারী

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০০
Share:

শিল্প হাতে গোপালবাবু। নিজস্ব চিত্র

ফেলনা জিনিস যেন প্রাণ পায় তাঁর হাতে। নারকেলের খোলা দিয়ে বানিয়ে ফেলেন কলসি। তার গায়ে সূক্ষ্ম নকশায় ফুটে ওঠে কৃষ্ণকথা। পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। সেই অভিজ্ঞানটুকু আঁকড়ে বিষ্ণুপুরের শাঁখারিবাজার মনসাতলার জেলেপাড়ার ছোট্ট ঘরে দিন কাটছে প্রবীণ শিল্পীর। সরকারি ভাতা পেতেন। মাস তিনেক হল সেটাও বন্ধ, জানান সাতাশি বছরের গোপাল নন্দী।

Advertisement

পরম্পরায় তিনি শঙ্খশিল্পী। ইঁদপুরের হাটগ্রাম এলাকায় ছিল আদি বাড়ি। বারো বছর বয়সে শাঁখের কাজে হাতেখড়ি, বাবার কাছে। সে সময়ে শাঁখের উপরে রামায়ণ, মহাভারত আর নানা পুরাণের গল্প খোদাই করে জেলায় তো বটেই, রাজ্যেও নামডাক হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় তাঁর হাতের কাজের সম্পূর্ণ কদর পেতেন না। গোপালবাবু জানান, ১৯৭৩ নাগাদ চলে আসেন বিষ্ণুপুর শহরে। তাঁর কথায়, ‘‘তার পরে শাঁখের দাম খুব বেড়ে যায়। হাত দেওয়াই যেত না। তখন উপকরণটাই বদলে ফেলি।’’

লাউ, বেল, নারকেলের খোলায় খোদাই করে নানা শিল্পসামগ্রী তৈরি করেছেন গোপালবাবু। নারকেল খোলার কলসিতে রাধাকৃষ্ণের লীলাকথা ফুটিয়ে তুলেছিলেন। সে কাজের জন্য ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। তার পরে কেন্দ্রীয় সরকারি ভাতা পেতেন। মাসে ৩,৬০০ টাকা। গোপালবাবু জানান, গত তিন মাস সেটা বন্ধ। সরকারি সহায়তায় হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলেছিলেন বিষ্ণুপুরে। নিখরচায় হাতের কাজ শিখত স্থানীয় ছেলেমেয়েরা। বছর তিনেক আগে একটি পথ দুর্ঘটনায় মাথায় চোট পাওয়ার পরে, সে পাটও উঠে গিয়েছে।

Advertisement

গোপালবাবুর মেয়ে শ্যামা রায় বলেন, “মাস তিনেক কেন্দ্রের পাঠানো ভাতা বন্ধ হয়ে রয়েছে। বাবার ওষুধ কেনার পয়সা নেই। মা পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পেয়েছেন। কোনও রকমে দিন কাটছে আমাদের।’’ তিনি জানান, ত্রিপলের ছাউনির নীচে বাবার একাধিক শিল্পকর্ম নষ্ট হতে বসেছে। হাতের কাজের সংগ্রহশালা তৈরি করার ইচ্ছা রয়েছে গোপালবাবুর। এখনও রাষ্ট্রপতির দেওয়া তাম্রফলক হাতে সেই স্বপ্ন দেখেন।

বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খান জানাচ্ছেন, বৃদ্ধ শিল্পীর এমন অবস্থার কথা জানা ছিল না তাঁর। সৌমিত্র বলেন, ‘‘উনি যাতে নিয়মিত কেন্দ্রীয় ভাতা পান, আমি তার চেষ্টা করব।’’ বিষ্ণুপুরের যে ওয়ার্ডে থাকেন ওই শিল্পী, সেখানকার কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, গোপালবাবু যাতে রাজ্য সরকারের শিল্পী-ভাতা পান সে জন্য মহকুমাশাসকের কাছে অনুরোধ

করবেন তিনি।

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, “গোপালবাবুর শিল্পকর্ম সংগ্রহশালায় রাখতে চাইলে আমি ব্যবস্থা করব। শিল্পী ভাতার বিষয়ে মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে কথা বলছি। এ ছাড়া, প্রশানিক স্তরে তাঁর বিষয়ে আলোচনা করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement