TMC Murder

সিপিএম নেতা-সহ ৩ জনের যাবজ্জীবন

মনোরঞ্জন বর্তমানে সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা, তালড্যাংরা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:২৮
Share:

নিহত তৃণমূল নেতার (ইনসেটে) ছেলে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল নেতা খুনের দায়ে বাঁকুড়ার তালড্যাংরার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক মনোরঞ্জন পাত্র, তাঁর ভাই জিতেন পাত্র ও আজবাহার খান নামে এক জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হল। বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দেন বিধাননগরের এমপি-এমএলএ আদালতের বিচারক মনোজ্যোতি ভট্টাচার্য। সেই সঙ্গে দোষীদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছ’মাস জেলে থাকতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

মনোরঞ্জন বর্তমানে সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি। ২০১০ সালের ২৯ জুন গুলিতে খুন হন তৃণমূল কর্মী ইয়াজুল রহমান খান ওরফে মদন খান। রায় শুনে এত দিনে তাঁরা স্বস্তি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিহতের পরিজনেরা। তবে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, ঘটনার দিন মনোরঞ্জন বিধানসভায় ছিলেন। রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা হাই কোর্টে আবেদন করবেন।

দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে বুধবারই তিন জনকে হেফাজতে নিয়ে জেলে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার জেল থেকে নিয়ে এসে তাঁদের পেশ করা হয় আদালতে। সরকারি আইনজীবী সোমা মণ্ডল জানান, নিহতের পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল যে মনোরঞ্জনের নেতৃত্বে সে দিন মদনের বাড়িতে হামলা চালায় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়। মদন সিপিএমে যোগ দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে খুন করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ ছিল। গুলি চালায় আজবাহার খান। মদনের দেহ লোপাটেরও চেষ্টা হয়। ৩০ জুন এ নিয়ে মামলা রুজু হয়। ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ৪৪৭, ৫০৬, ৩০২ ও ১৪৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল ধৃতদের বিরুদ্ধে। মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বাকি ১৮ জনকে। এ দিন সাজা ঘোষণার সময়ে আদালত দোষীদের বক্তব্য জানতে চাইলে তাঁরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন।

Advertisement

তবে এ দিন রাজপুর গ্রামে গেলে মদনের পরিবার জানান, সত্যের জয় হল। মদনের বড় ছেলে ইসমাইল খান সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তিনি জানান, দীর্ঘ বাম শাসনে এলাকায় জনরোষ তৈরি হয়েছিল। তৃণমূলের সংগঠনও বেড়ে উঠছিল। রাজপুর গ্রামে দলের প্রথমসারিতে ছিলেন মদন। সিপিএমের ছেলেদের বিরুদ্ধে স্থানীয় এক যুবকের মারধরের অভিযোগকে ঘিরে এলাকায় হঠাৎ তেতে উঠেছিল। তৃণমূল কর্মীদের দাবিয়ে রাখতে বহিরাগতদের গ্রামে এনে জড়ো করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ।

ইসমাইলের স্মৃতিতে ফিরে আসে সে দিন। তাঁর দাবি, ‘‘ঘটনার দিন দুপুর থেকেই খাঁকি পোশাক পরা ‘সিপিএম ক্যাডার’-দের ভিড় জমছিল গ্রামের মোড়ে। বাবাকে ওরা আটকে রেখে সিপিএমের যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। বাবা রাজি না হওয়ায় বচসা শুরু হয়। তৃণমূল কর্মীরাও জড়ো হন। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতেই হঠাৎ এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে সিপিএমের ক্যাডাররা। তখনই গুলিবিদ্ধ হয় খুড়তুড়ো ভাই সফিকুল খান ও মেজদা আমজাদ খান। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের তুলে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে রেখে বাড়ি ফিরছিল বাবা। আমি ছিলাম বাবার ঠিক পিছনেই। হঠাৎই সিপিএমের ক্যাডাররা বাবার পেটে গুলি চালায়।’’

ইসমাইলের অভিযোগ, তাঁর বাবার দেহের খোঁজে সিপিএমের ক্যাডাররা গ্রামে একের পর এক বাড়িতে তল্লাশি চালায়। বাঁশঝাড়ে মদনের দেহ নিয়ে সারা রাত লুকিয়েছিলেন তাঁরা। পরের দিন গ্রামে তৃণমূল নেতৃত্ব, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা এলে তাঁরা দেহ নিয়ে বেরোন। ইসমাইলের দাবি, ‘‘ঘটনার দিন মনোরঞ্জন পাত্র এলাকায় বসে ষড়যন্ত্র করে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। ওদের সাজা হওয়ায় আমরা খুশি। সত্যের জয় হল।’’

যদিও সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির দাবি, “আদালতের রায় খতিয়ে দেখে উচ্চ আদালতে আমরা যাব। তবে মনোরঞ্জন সে দিন বিধানসভায় ছিলেন বলে তথ্য প্রমাণ আদালতে দেওয়া হয়েছিল।”

মদনের বাড়ির সামনে একটি শহিদবেদি গড়েছে তৃণমূল। তবে তাঁর পরিবার এখনও জীর্ণ কাঁচা বাড়িতেই বাস করে। গুলিবিদ্ধ হওয়া সফিকুল ও আমজাদ কর্মক্ষতা হারিয়েছেন। বাড়ির অনেকেই কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত। সে সব প্রসঙ্গ তুলে ইসমাইল বলেন, “বাবা দলের জন্য জীবন দিলেন। প্রথমে দল আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু আজও কোনও সুযোগ-সুবিধা পাইনি। দেড়বিঘা জমিতে চাষ করে খাই আমরা। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে আজও আমরা বিশ্বাসী।”

তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাম আমলের প্রকৃত রূপের অন্যতম উদাহরণ তালড্যাংরার ওই হত্যাকাণ্ড। আমি শীঘ্রই ওই শহিদ পরিবারে গিয়ে তাঁদের সমস্যা শুনব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement