জঙ্গলমহল

স্কুলছুট কমেছে, এগিয়ে আসছে এ বার ছাত্রীরাও

বেশ কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় উঠে আসছে জঙ্গলমহলের নাম। বাঁকুড়া বা পুরুলিয়া জেলা স্কুলের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে পাল্লা দিচ্ছে প্রচারের আলোয় না আসা ছোট বড় অনেক স্কুল। আর এই ফলাফল দেখে অনেকেই দাবি করছেন, অন্য একটি পরীক্ষাতেও পাস করছে জঙ্গলমহল। সেই পরীক্ষা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ের।

Advertisement

প্রশান্ত পাল ও দেবব্রত দাস

খাতড়া ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০২:২২
Share:

বেশ কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় উঠে আসছে জঙ্গলমহলের নাম। বাঁকুড়া বা পুরুলিয়া জেলা স্কুলের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে পাল্লা দিচ্ছে প্রচারের আলোয় না আসা ছোট বড় অনেক স্কুল। আর এই ফলাফল দেখে অনেকেই দাবি করছেন, অন্য একটি পরীক্ষাতেও পাস করছে জঙ্গলমহল। সেই পরীক্ষা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ের।

Advertisement

২০০৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছিল বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের গড়রাইপুর হাইস্কুলের ছাত্র কুমুদ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় জঙ্গলমহল জুড়ে অশান্তি লেগেই ছিল। মাওবাদী সক্রিয়তা ঘুম কেড়ে নিয়েছিল সাধারণ মানুষের। তার পরে কংসাবতী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও অনেক বদল এসেছে। এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরোনোর পরে প্রচারের আলোয় উঠে এসেছে গড়রাইপুর হাইস্কুল, সারেঙ্গা মহাত্মাজি স্মৃতি বিদ্যাপীঠ, গড়গড়িয়া সুভাষ হাইস্কুল, খাতড়া হাইস্কুল, কংসাবতী শিশু উচ্চবিদ্যালয়, সিমলাপালের মদনমোহন হাইস্কুল, মঙ্গলময়ী বালিকা বিদ্যালয়— এমন অনেক নাম।

জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, জঙ্গলমহলের সামগ্রিক ছবিটা ক্রমশ বদলে গিয়েছে। আগে হাইস্কুলের গণ্ডী পেরোনো হত না এই সমস্ত এলাকার অনেক পড়ুয়ারই। কিন্তু এখন স্কুলছুটের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে বলে শিক্ষকদের একাংশের দাবি। তাঁরা জানান, প্রতি বছর মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তেমন ভাবেই বাড়ছে পাশের হার এবং সর্বোচ্চ নম্বর।

Advertisement

এই সাফল্যকে জঙ্গলমহলের সামগ্রিক পরিস্থিতির একটা টুকরো ছবি হিসাবেই দেখতে চান অনেকেই। বিগত বছরগুলিতে এই এলাকায় রাজনৈতিক হানাহানির নজির প্রায় নেই বললেই চলে। বাসিন্দাদের আর্থিক অবস্থা কিছুটা হলেও ভাল হয়েছে।

যেমন বান্দোয়ান। পুরুলিয়ার জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুষেণচন্দ্র মাঝি বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেও এই এলাকায় দিনের পর দিন বন্‌ধ লেগেই থাকত। সব সময় আতঙ্কে থমথমে হয়ে থাকত পরিবেশ। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত।’’ বলরামপুরের লালিমতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জয়া দত্ত এবং বাঘমুণ্ডি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইরা হাজরার দাবি, জঙ্গলমহলে বিশেষত মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনায় উৎসাহ বাড়ছে। ইরাদেবী বলেন, ‘‘আগে এক একটা ক্লাসে হাতে গোনা ছাত্রী থাকত। এখন বছর বছর ক্লাস ঘর ভরে উঠছে।’’ বিনা পয়সার সাইকেল বা কন্যাশ্রীর টাকা স্কুলছুটের সংখ্যা অনেকটাই কমিয়েছে বলে তাঁদের দাবি।

তবে ঝালদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বান্দোয়ানের ঋষি নিবারণচন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা কাকলি আচার্যও ছাত্রীদের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা কমার পিছনে তাঁদের এবং অভিভাবকদের সচেতনতার দিকটিকেই গুরুত্ব দিতে চান। শুক্লাদেবী বলেন, ‘‘আগে অভিভাবকদের ধারণা ছিল, মেয়েরা অল্প পড়াশোনা করবে। তার পরে সংসার করবে। কিন্তু এখন সচেতনতা তৈরি হয়েছে। লেখাপড়ার গুরুত্ব বুঝতে পেরে মেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকেরা।’’

বাঁকুড়ার রানিবাঁধ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ পাইন এবং সিমলাপালের লায়েকপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপকুমার দে জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর স্কুল দু’টিতে ৪ থেকে ৫ শতাংশ পাশের হার বেড়েছে। রানিবাঁধেরই দেউলি শুক্লা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভাশিস সিংহও বলেন, “শুধু এলাকার পরিবেশ নয়, বিগত কয়েক বছর ধরে স্কুলের পরিবেশ আমূল বদলে গিয়েছে। স্কুলছুট নেই। প্রতি বছর আমাদের স্কুলে পাশের হার বাড়ছে।’’ সিমলাপালের মঙ্গলময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ঝর্ণা সিংহ অবশ্য পড়ুয়াদের কৃতিত্বের উপরই সব চেয়ে বেশি জোর দিতে চান। তিনি বলেন, ‘‘ভাল ফল করার জন্য পড়ুয়ারা পরিশ্রম করছে। ওরা নিজেরা উদ্যোগী না হলে এই ফল হতই না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement