গোপালবাবুর পরিবারের সঙ্গী ম্যানিকুইনও। ছবি: শুভ্র মিত্র
গলায় খাবার আটকে গেলে কী ভাবে সুস্থ করতে হয় তা ম্যানিকুইন হাতে গ্রামে-গঞ্জে প্রশিক্ষণ দেন তিনি। কোনও দিন কারও উপরে প্রয়োগের প্রয়োজন পড়েনি। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সদস্য বিষ্ণুপুরের কাঁকিলা গ্রামের সেই গোপাল দত্ত শ্বাসনালিতে দুধ আটকে যাওয়া নিজের ন’মাসের শিশুকে বাঁচালেন ওই কৌশলেই।
শনিবার সকালে গোপালবাবুর স্ত্রী সোমা ন’মাসের সন্তান পুলস্তকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। আধো ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা পুলস্তকে তার দিদি আদর করতে গেলে মুখে থাকা দুধ শ্বাসনালিতে ঢুকে গিয়ে বিপত্তি বাধে। শ্বাস আটকে যায়। শরীরে অক্সিজেনের অভাবে কয়েক মুহূর্ত ছটফট করে নেতিয়ে পড়ে শিশুটি। পেশায় মুদির দোকানদার গোপালবাবু সেই সময়ে ছিলেন পাশের ঘরে। গোপালবাবু বলেন, ‘‘কান্নাকাটি শুনে ছুটে গিয়ে দেখি, ছেলের চোখ উল্টে গিয়েছে, মুখ হাঁ করে খোলা, দেহে সাড় নেই। বুঝতে পারি, শ্বাসরোধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেরি করা যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে বাঁ হাতে উপুড় করে শুইয়ে পিঠে তিনটে ধাক্কা দিই। কেঁদে ওঠে ছেলে। তারপরে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যায়।’’
তিনি জানান, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির রাধানগর শাখার সঙ্গে বছর পাঁচেক ধরে তিনি যুক্ত। বছর দুয়েক ধরে তিনি নিজে ম্যানিকুইন নিয়ে বিভিন্ন অলোচনাসভা ও হাটে-বাজারে গলায় আটকে যাওয়া খাবার বার করার কৌশল শিখিয়ে আসছেন। তবে কোনও দিন নিজের জীবনে সেই কৌশলের প্রয়োগ করতে হবে, তা ভাবেননি।’’
বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৌম্য সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের তৈরি ভিডিয়ো, কর্মশালা থেকে অনেকে প্রশিক্ষিত হয়েছেন। তার মধ্যে গোপালবাবুর পরিবারের ওই ঘটনাকে ধরে আমাদের পরিচিত মহলেই ১৪ জনের জীবন বাঁচাল চিকিৎসক হেনরি হাইমলিখের আবিষ্কৃত এই পদ্ধতি।’’
বিষয়টি কি? সৌম্যবাবু জানান, শ্বাসরোধের পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রথমে কথা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় অসুস্থের পেটে জোরে চাপ দিলে মধ্যচ্ছদায় চাপ পড়ে এবং ফুসফুসে জমে থাকা বাতাসের ঠেলায় গলায় আটকে থাকা বস্তুটি ছিটকে বেরিয়ে আসে।
পুলস্তকে জড়িয়ে ধরে মা বলেন, ‘‘কাজ ফেলে স্বামী গ্রামে-গঞ্জে কী করতে যেতেন, ঠিক বুঝতে পারতাম না। আজকে তা ঠেকে শিখলাম।’’