temple

Aandharkuli Temple: ৪৬ বছর পর নবম বার বিয়ের পিঁড়িতে আঁধারকুলি, রাজশোলে এখন সাজ সাজ রব

আঁধারকুলির পাত্রী এক জনই। প্রতি বারই আঁধারকুলি বিয়ে করেন তিন নামো-সলদা গ্রামের সামন্তদের আঠেরোবাড়ির কন্যাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়পুর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২২ ১৮:১২
Share:

ছাদনাতলায় চলছে গায়েহলুদের আয়োজন। —নিজস্ব চিত্র।

এখনও পর্যন্ত আট বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের রাজশোল গ্রামের আঁধারকুলি। শেষ বার বিয়ে হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। ৪৬ বছর পর এ বার নবম বারের জন্য তিনি আবার বসতে চলেছেন বিয়ের পিঁড়িতে। কনে তিন কিলোমিটার দূরের নামো-সলদা গ্রামের সামন্ত বাড়ির। নাম মুক্তোধান। বৃহস্পতিবার সন্ধের পর নামো সলদা গ্রামে ৭০০ বরযাত্রী নিয়ে আঁধারকুলি হাজির হবেন কনেপক্ষের বাড়িতে। ছাদনাতলায় নবম বারের জন্য বসবে বিয়ের আসর। এই অনুষ্ঠান ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাজ সাজ রব রাজশোল এবং নামো-সলদা দুই গ্রামেই।

Advertisement

কথিত আছে, রাজশোল গ্রামের আঁধারকুলির বয়সের কোনও গাছপাথর নেই। কেউ বলেন, তাঁর বয়স ৫০০। আবার কারও মতে, ওঁর বয়স আরও বেশি। এক সময় বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের অধীনে থাকা রাজশোল গ্রামের আঁধারকুলি আসলে ধর্ম ঠাকুর। গ্রামে আঁধারকুলির নিজস্ব মন্দিরে তাঁর মুর্তি নিয়মিত পূজিত হয়। তবে কয়েক দশক পর পর তাঁর বিয়ের আয়োজনও করেন গ্রামের মানুষজন। কোনও নির্দিষ্ট সময় অন্তর নয়, আঁধারকুলির বিয়ের জন্য যে বিপুল খরচ প্রয়োজন তা জোগাড় করে উঠতে পারলেই বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এমনটাই রীতি গ্রামের। তাই এ বার সাড়ে চার দশক পর আবার আঁধারকুলির বিয়ের আয়োজন করেছেন রাজশোল গ্রামের মানুষ। বছর পাঁচেক আগে গ্রামের মানুষ আলোচনা করে স্থির করেন ২০২২ সালের এই সময়ে আবার বিয়ে দেওয়া হবে আঁধারকুলির। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। যে বছর আঁধারকুলির বিয়ে হয় সে বার রাজশোল গ্রামে অক্ষয় তৃতীয়া থেকে শুরু হয় গাজন উৎসব। চলে বুদ্ধ পূর্ণিমা পর্যন্ত। এরই মাঝে একাদশী তিথিতে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন আঁধারকুলি। এমনটাই রীতি গ্রামের।

আঁধারকুলির বিয়ে যত বার খুশি হোক না কেন, পাত্রী এক জনই। প্রতি বারই আঁধারকুলি বিয়ে করেন তিন কিলোমিটার দূরের নামো-সলদা গ্রামের সামন্তদের আঠেরোবাড়ির কন্যা মুক্তোধানকে। মুক্তোধান আসলে বিশেষ প্রজাতির ধান। সামন্ত পরিবারের দাবি, এই বিশেষ প্রজাতির ধান ভূভারতে আর কোথাও চাষ হয় না। শুধুমাত্র আঁধারকুলির বিয়ে উপলক্ষে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নামো-সলদা গ্রামের সামন্ত পরিবার এই ধানের চাষ করেন। এই বিশেষ প্রজাতির ধান থেকে হওয়া চাল কলসিতে রেখে বিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement
আরও পড়ুন:

নিয়ম মেনে বৃহস্পতিবার সকালে বারোটি ডালিতে তত্ত্ব সাজিয়ে পাত্রপক্ষ হাজির হয়েছিলেন কনেপক্ষের বাড়িতে। তাতে ছিল বেনারসি, হরেকরকম মিষ্টি, আলতা, সিঁদুর, প্রসাধনী, মাছ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র। শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় নামে ওই বিয়ের এক উদ্যোক্তা বলেন, ‘‘আঁধারকুলির বিয়ে উপলক্ষে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি এখন অতিথির ভিড়। সন্ধ্যের পর গ্রামের পুরুষ এবং মহিলারা সেজেগুজে শোভাযাত্রা করে বিয়েতে যোগ দেবেন। ফুলে সাজানো পালকিতে করে আঁধারকুলির প্রতীক হিসাবে তাঁর দুটি খড়ম নিয়ে যাওয়া হবে ছাদনাতলায়। সেখানে পুরোপুরি বৈদিক শাস্ত্র মতে তিথিনক্ষত্র মেনে বিয়ে হবে।’’

ব্যস্ততা কম নেই কনেপক্ষেও। কৌশিক সামন্ত নামে কনেপক্ষের এক কর্তা বললেন, ‘‘মুক্তোধানের বিয়ে বলে কথা। জাঁকজমকের কোনও ত্রুটি আমরা রাখিনি। বিষ্ণুমন্দিরের সামনে ছাদনাতলা সাজানো হয়েছে। এক জন মূল পণ্ডিত-সহ মোট চার জন পুরোহিত এবং নাপিতে বিয়ের যাবতীয় আয়োজন সামলাবেন। বরযাত্রীদের জন্য রান্নাবান্নাও হচ্ছে। বরযাত্রীরা গ্রামে পৌঁছলে আমাদের পরিবারের মহিলারা বরযাত্রীদের পা ধুইয়ে বরণ করবেন। নিয়ম মেনে দেওয়া হবে শরবত, ভেজা ছোলা, গুড় এবং বাতাসা। রাতের খাবারে থাকছে লুচি, তরকারি, চাটনি, দই এবং মিষ্টি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement