পরিচারিকার বিজ্ঞাপন দেখেই অপহরণের ছক কষে টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করে ধৃতেরা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কাগজে পরিচারিকার বিজ্ঞাপন দেখেই বৃদ্ধের কাছ থেকে টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করেছিল হুগলির পোলবা অপহরণ-কাণ্ডের ধৃতেরা। শঙ্করবাটির সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ জীবনকৃষ্ণ পালের বাড়িতে ধৃত মমতা মাইতি পরিচারিকার কাজ করতে যায়নি, গিয়েছিল রেইকি করতে। এমনই তথ্য উঠে এল তদন্তে।
পরিচারিকাকে আনতে গিয়েই অপহৃত হয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ। তাঁর মুক্তির জন্য তিন লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন অপহরণকারীরা। এর পরেই পোলবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন জীবনকৃষ্ণের ছেলে প্রসেনজিৎ পাল। অপহরণের অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তদন্তে নামেন পুলিশ আধিকারিকেরা। যে মোবাইল থেকে ফোন করে বৃদ্ধের মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছিল, সেই মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চার অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম বিশ্বনাথ ভৌমিক, কল্যাণ মন্ত্রী, মমতা মাইতি ও মানসী সিংহ। এরা প্রত্যেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। বিশ্বনাথ ও মানসীর বাড়ি চণ্ডীপুরে। কল্যাণের বাড়ি নন্দীগ্রাম আর মমতার বাড়ি বাচকুলে।
বুধবার দফায় দফায় ধৃতদের জেরা করে বৃহস্পতিবার হুগলির পুলিশ সুপার আমনদীপ জানান, পরিচারিকার বিজ্ঞাপন দেখেই অপহরণের ছক কষে টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করে ধৃতেরা। মমতা জেরায় জানিয়েছে, বিজ্ঞাপন দেখেই মাস দেড়েক আগে জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে কাজ করতে এসেছিল সে। তার পর তিন দিনের মাথায় কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎই চলে যায়। শঙ্করবাটির দোতলা বাড়িতে কী অবস্থায় থাকেন জীবনকৃষ্ণ, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কত, বাড়িতে তাঁর সঙ্গে আর কারা থাকেন— এই সব তথ্য জানতেই জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে পরিচারিকা হিসাবে কাজে যোগ দেয় সে।
পুলিশ আধিকারিকদের দাবি, ধৃতেরা একই জেলার বিভিন্ন জায়গায় থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বহু দিন ধরেই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত। শুধু এই ঘটনায়ই নয়, এরা বহু দিন ধরেই ‘গ্যাং’ হিসাবে কাজ করছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি ইন্ডিগো গাড়ি, ছ’টি মোবাইল ফোন আর ভোজালি। যদিও ধৃতেরা অতীতে কোন কোন অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল, সে ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। আমনদীপ বলেন, ‘‘ওদের সম্পর্কে আরও তথ্য জোগাড় করছি আমরা। এর আগে ওরা কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল কি না, গ্যাঙে আর কেউ আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছি।’’
বৃহস্পতিবার ধৃতদের চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানোর কথা। তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই ‘গ্যাং’ সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জানা যাবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।