প্রতীকী ছবি
প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে স্কোয়াড ছেড়ে চম্পট দিলেন মাওবাদী নেতা মহারাজ প্রামাণিক। সঙ্গে নিয়ে গেলেন সংগঠনের চল্লিশ লক্ষ টাকা, একাধিক বন্দুক, বেশ কিছু কার্তুজ, ট্যাব, ওয়াকিটকি, মোবাইল-সহ আরও কিছু জিনিসপত্র। মহারাজের এই অপরাধের জন্য তাঁকে গণ-আদালতে বিচার করে শাস্তি দেওয়ার ফতোয়া জারি করেছে মাওবাদীরা। সম্প্রতি সিপিআই (মাওবাদী) দক্ষিণ জোনাল কমিটির তরফে তাঁদের মুখপাত্র অশোক হিন্দিতে লেখা একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে এই ফতোয়ার কথা জানিয়েছেন।
কে এই মহারাজ? জানা গিয়েছে তাঁর বাড়ি ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা খরসোয়া জেলার ইছাগড় থানার দারুদা গ্রামে। একসময় ঝাড়খণ্ড পুলিশে গাড়ি-চালকের চাকরি পান। ২০০৮ সালে একাধিক চুরির ঘটনায় নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তাঁকে দু’বার জেল খাটতে হয়।
জেল থেকে বেরিয়ে আসার পরই যোগ দেন মাওবাদীদের সঙ্গে। মহারাজের সাংগঠনিক ক্ষমতা ভাল থাকায় দ্রুত তাঁর উত্থান ঘটতে থাকে সংগঠনে। প্রথমে সাধারণ স্কোয়াড সদস্য হিসাবে কাজ করলেও অল্প দিনের মধ্যেই এরিয়া কমিটি ও জোনাল কমিটিতে জায়গা হয় তাঁর। ২০১১ সালে মহারাজ সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের এরিয়া কমিটির সদস্য হন। ২০১৫ সালের গোড়াতেই তিনি দক্ষিণ জোনাল কমিটির সদস্যপদ পান। বেশ কিছুদিন আগে তাঁকে মাওবাদীদের বুন্ডু চান্ডিল সাব জোনের ইনচার্জ করা হয়।
২০১১ সালে এরিয়া কমিটির সদস্য থাকাকালীন মহারাজের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের এরিয়া কমিটির সদস্যা বেলুন সর্দারের। জানা গিয়েছে বেলুনের বাড়ি ঝাওখণ্ডের সরাইকেলা খরসোয়া জেলার রাজমা গ্রামে। একাধিক নাশকতার ঘটনায় দু’জনে একসঙ্গে কাজ করেছেন বলেও জানা গিয়েছে। তাঁদের দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক নজর এড়ায়নি সংগঠনের নেতৃত্বেরও। কিন্তু সংগঠনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই নেতার ব্যাক্তিগত জীবনে সে ভাবে নাক গলাননি সংগঠনের অন্যান্যরা। সেই প্রেমিকাকে নিয়েই স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে স্কোয়াড ছেড়ে পালান মহারাজ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালের পর থেকে বাংলা ও ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকায় একাধিক মাওবাদী নাশকতায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন মহারাজ ওরফে রাজ। ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা খরসোয়া জেলার তিরুলডিহি থানা এলাকায় দুঃসাহসিক নাশকতা, পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডি থানার সুইসা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের অংশে নাশকতার ঘটনা-সহ বিভিন্ন ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মহারাজের বিরুদ্ধে। শুধুমাত্র ঝাড়খণ্ড রাজ্যেই কমবেশি ২৫টি খুন ও নাশকতার ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে এই মাও নেতার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড সরকার এই মাও নেতার মাথার দাম দশ লক্ষ টাকা ঘোষণা করে।
সিপিআই (মাওবাদী)-দের তরফে প্রকাশিত প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘মাঝেমধ্যেই স্কোয়াড ছেড়ে চলে যেতেন মহারাজ। গত ২২ জুন তৃতীয় বারের জন্য স্কোয়াড ছাড়েন তিনি। প্রায় এক মাস পুলিশের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রেখে তিনি ২৬ জুলাই ফিরে আসেন স্কোয়াডে। পুলিশের সঙ্গে চক্রান্ত করে গোটা স্কোয়াডকেই তিনি পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁর আচরণ সংগঠনের কর্মীদের চোখে সন্দেহজনক হয়ে ওঠে। এটা বুঝতে পেরেই প্রেমিকা-সহ সংগঠনের বিপুল অঙ্কের টাকা, অস্ত্র, গুলি নিয়ে চম্পট দিয়েছেন তিনি।
মাওবাদীদের বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘সংগঠনের প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকা, একটি একে ৪৭ রাইফেল, একটি নাইন-এমএম পিস্তল, ওয়াকিটকি, মোবাইল ও ট্যাব নিয়ে স্কোয়াড ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তাঁকে দল থেকে বহিস্কার করে গণ-আদালতে শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’