নিহত ডালু শেখ। নিজস্ব চিত্র
বোমায় নিহত ডালু শেখ এক সময় সিপিএমের কর্মী ছিলেন। অবৈধ বালি ব্যবসাতেও এক সময়। তাঁর নাম জড়িয়েছিল। পরে মনিরুল ইসলামের হাত ধরে তৃণমূলে ঢোকেন বলে মীরবাঁধ গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। ডালুর পরিবারের সদস্যেরা অবশ্য বালি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকা এবং তৃণমূলে ঢোকার কথা মানেননি। তাঁদের দাবি, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দাপটে দীর্ঘদিন তাঁকে গ্রামছাড়া থাকতে হয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেন। মাস তিনেক আগে গ্রামে ফিরেছিলেন। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, গ্রামে ফিরে এলাকায় বিজেপি-র সংগঠন বাড়ানোর কাজও করছিলেন। সেই কারণে তাঁকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে।
ডালু শেখের বাড়ি যে পঞ্চায়েত এলাকায়, লাভপুরের সেই দাঁড়কায় বোমাবাজিতে হতাহতের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক বার বোমাবাজির ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে অনেকের। আহতের সংখ্যাও কম নয়। মূলত বালিরঘাট এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় ওই এলাকায় বোমাবাজিতে তেতে উঠেছে বিভিন্ন গ্রাম। দাঁড়কা পঞ্চায়েত এলাকার পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে ময়ূরাক্ষী নদী। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, সেই নদীর অবৈধ বালিঘাটের দখল নেওয়াকে ঘিরে সমাজবিরোধীদের মধ্যে বোমাবাজি লেগেই রয়েছে। যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে, বালি কারবারিরা তাদের আশ্রয়েই থাকে। বালি মাফিয়ারা একচেটিয়া ঘাটের দখল নিতে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। আবার ক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও অবস্থান বদল হতে থাকে। রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করেও বোমাবাজির ঘটনা ঘটে।
২০১৭ সালে মীরবাঁধ ও দরবারপুর গ্রামের বালি মাফিয়াদের বিবাদের জেরে দরবারপুরে বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৯ জনের। ওই বছরই বালিরঘাটের বিবাদে স্থানীয় সাউগ্রামে বোমা মেরে তৃণমূলের ব্লক কমিটির সদস্য এবং লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত লখরিদ শেখকে খুনের অভিযোগ ওঠে অবৈধ বালির কারবারিদের বিরুদ্ধে। কয়েক মাস আগেই তৃণমূলের মীরবাঁধ (এখানে বাড়ি ডালু শেখের) গ্রাম কমিটির সভাপতি আহাদুর শেখ নামে এক বালি ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে বোমা মারে দুষ্কৃতীরা। প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর একটি হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডালু শেখ খুনে অন্যতম অভিযুক্ত এই আহাদুর।
সম্প্রতি বিস্ফোরণে উড়ে যায় দাঁড়কা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি পরিত্যক্ত কোয়ার্টার। তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সভাপতি কাজল রায়ের বাড়িতে বোমা মারার অভিযোগ ওঠে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। তার পর থেকে ওই পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে পুলিশি তল্লাশিতে প্রায়ই বোমা উদ্ধার হচ্ছে। তার পরেও যে বোমা মজুত এবং বোমার লড়াইয়ে রাশ টানা যায়নি, তার প্রমাণ শনিবার রাতে ডালু শেখের খুন হওয়া এবং রবিবার হাতিয়া গ্রামে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে বোমার লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে।
বিজেপি-র জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের দাবি, ‘‘সব জায়গায় আমাদের সংগঠন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই তৃণমূল দুষ্কৃতীদের বোমা-বারুদ দিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তীর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। বিজেপি-ই বোমা-বারুদ আমদানি করে বারবার এলাকা অশান্ত করছে।’’