বিশ্ব ঐতিহ্য সপ্তাহের মধ্যেও আবর্জনা জমে রাসমঞ্চের কাছে। ছবি: শুভ মিত্র।
বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্রের স্বীকৃতি পেয়েছে শান্তিনিকেতন। এই ঘোষণায় আশায় বুক বাঁধছেন মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের বাসিন্দারা। পাশাপাশি, কেন এখনও বিষ্ণুপুরকে ওই স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলে আক্ষেপ করছেন অনেকে।
রবিবার থেকে শুরু হয়েছে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য সপ্তাহ’। বুধবার সেই উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান হয় বিষ্ণুপুরের রাসমঞ্চে। সেখানে স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে অঙ্কন এবং প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতা হয়। ছিলেন পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সহ-পুরাতত্ত্ববিদ মনীশ বর্মা, মডেলার (প্রত্নসামগ্রীর প্রতিমূর্তি নির্মাণকারী) স্তুতি লাহা, বিষ্ণুপুর জেলা সংগ্রহশালার কিউরেটর তুষার সরকার, বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান গৌতম গোস্বামী-সহ অন্য আধিকারিকেরা। বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতির দাবিতে বিষ্ণুপুরে পদযাত্রাও হয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের উদ্যোগে।
পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা মণ্ডল ও বিষ্ণুপুর উপমণ্ডলের সংরক্ষণ সহায়ক সন্দীপ সিংহ বলেন, “ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) তালিকায় প্রাচীন শহর বিষ্ণুপুরের অন্তর্ভুক্তির আশায় পালিত হল বিশ্ব ঐতিহ্য সপ্তাহ।”
রাসমঞ্চে চলল অঙ্কণ প্রতিযোগীতা। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী।
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্র ঘোষণা সংক্রান্ত ‘টেনটেটিভ’ (শর্তসাপেক্ষ) তালিকায় বিষ্ণুপুরের মন্দিরের নাম রয়েছে সেই ১৯৯৮-র ৩ জুলাই থেকে। কিন্তু ২৫ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি। বুধবার রাসমঞ্চ বেড়াতে এসে মুম্বইয়ের বাসিন্দা প্রতিভা পাটেল বলেন, “বিষ্ণুপুরের টেরাকোটার মন্দির ও পুরাণ কাহিনী সমৃদ্ধ নকশা বিরল। জানি না এখনও কেন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্রের তালিকায় বিষ্ণুপুরকে অন্তর্ভুক্ত করা হল না? শান্তিনিকেতন স্বীকৃতি পেলেও বিষ্ণুপুরকে বঞ্চিত করা হল কেন?”
জোড়বাংলা মন্দির দেখতে আসা বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা গৌরহরি চক্রবর্তী বলেন, “ বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্য অনবদ্য। বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্রের স্বীকৃতি পেতে হলে সংশ্লিষ্ট স্থানের পরিকাঠামো কেমন হওয়া প্রয়োজন তা আমার জানা নেই। সেই পরিকাঠামো বিষ্ণুপুরে রয়েছে কিনা, তা-ও জানি না। ত্রুটি থাকলে তা আগে মুক্ত করা দরকার। নিশ্চয়ই এক দিন বিষ্ণুপুর সেই স্বীকৃতি পাবে।”
এ দিন আলোচনাসভায় পুরপ্রধান, “বিষ্ণুপুরের মন্দিরের গঠনশৈলী, ভাস্কর্য, টেরাকোটার নকশায় পৌরাণিক কাহিনীর বিবরণ বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা, তা জানা নেই। বিষ্ণুপুর বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্রের তকমা পেলে তা দেশের ও দশের কাছে আনন্দের বিষয় হবে। বিষয়টি ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরতে পারে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের আধিকারিকেরাই।”
আচার্য যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবনের কিউরেটর তুষার সরকার মনে করেন, বিষ্ণুপুর বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্রের তকমা পেলে বাঁকুড়া জেলা আরও সমৃদ্ধ হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রচারের দায়িত্ব বেশি করে নিতে হবে ছাত্র সমাজকে।