ঝলসে জখম ১৫ শ্রমিক। — নিজস্ব চিত্র।
কারখানার গলিত লোহায় ঝলসে গিয়ে জখম হলেন অন্তত ১৫ জন শ্রমিক। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার বড়জোড়া শিল্প তালুকের একটি বেসরকারি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায়। ঘটনায় আহতদের প্রথমে বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে দশ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের স্থানান্তরিত করা হয় দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য দিনের মতোই মঙ্গলবার বড়জোড়া শিল্প তালুকের ঘুটগড়িয়া এলাকায় থাকা বিডি গোয়েল নামের ওই বেসরকারি স্পঞ্জ আয়রন কারখানাটিতে কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। সেই সময় দুর্ঘটনাবশত চুল্লির মধ্যে তরল অবস্থায় থাকা ফুটন্ত লোহা ছিটকে পড়ে চার দিকে। চুল্লির অদূরে থাকা শ্রমিকদের গায়ে গিয়ে পড়ে ওই গলিত লোহা। অন্তত ১৫ জন শ্রমিক ঝলসে যান ওই গলিত লোহায়। কারখানার তরফে দ্রুত আহতদের উদ্ধার করে বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহতদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কারখানার একটি সূত্রের মতে, গলিত লোহা ক্রেনের সাহায্যে কারখানার ভিতরে অন্যত্র সরানোর কাজ চলছিল। সেই সময় ক্রেন ছিঁড়ে যায়। তার ফলে গলিত লোহা ছিটকে পড়ে শ্রমিকদের উপর। অন্য একটি সূত্রের মতে, চুল্লির গলিত লোহা উপচে পড়ে শ্রমিকদের গায়ে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ১৫ জন শ্রমিকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিছে। এর মধ্যে চার জনের অবস্থা গুরুতর। কারখানায় পুলিশ আধিকারিকরা পৌঁছে ঘটনার তদন্ত করছেন।’’
এ নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাসপাতালে জখমদের চিকিৎসা চলছে। আমরা আহতদের চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় দেখভাল করছি। ১০ জনের অবস্থা গুরুতর।’’
ঘটনার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলাতিকেই দায়ী করেছে বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি। বাম শ্রমিক নেতা তথা সিপিএম এর বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী বলেন, ‘‘বাম আমলে কারখানার মালিকরা শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে শ্রমিক সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতেন। এখন কারখানাগুলিতে শুধু তোলাবাজি চলে। আর তার সুযোগ নিয়ে মালিকপক্ষ শ্রমিক সুরক্ষা-সহ শ্রমিকদের অন্যান্য দাবিদাওয়া অবহেলা করে। তার ফলেই এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।’’
বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ কর বলেন, ‘‘বড়জোড়ার কারখানাগুলিতে শাসকদলের নেতানেত্রীরা তোলাবাজি এবং লুটপাট চালাচ্ছেন। ফলে শ্রমিকদের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে। সুরক্ষার সামান্য ব্যবস্থাটুকুও করছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ।’’ যদিও এ নিয়ে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।