দ্বন্দ্ব মিটিয়ে মিলেমিশে কাজ করতে নির্দেশ মমতার। —ফাইল চিত্র।
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষদের একাংশের সঙ্গে সভাধিপতির যে বনিবনা হচ্ছে না, সে খবর তাঁর কাছে আগেই পৌঁছেছে। তাই বুধবার খাতড়ার মঞ্চে ওঠার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রিনরুমে দু’পক্ষকে ডেকে দ্রুত দ্বন্দ্ব মিটিয়ে মিলেমিশে কাজ করতে নির্দেশ দিয়ে গেলেন।
তৃণমূল সূত্রে খবর, মঙ্গলবার জেলায় এসেই মমতা জানিয়েছিলেন, খাতড়ায় জেলা পরিষদের সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন। মঞ্চের পিছনে গ্রিনরুমে ছিলেন দলের বাঁকুড়া সংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায়, সহ-সভাধিপতি পরিতোষ কিস্কু, কর্মাধ্যক্ষেরা এবং কিছু সদস্য।
সম্প্রতি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষদের বড় অংশ সভাধিপতির বিরুদ্ধে আলোচনা না করে কাজ করার অভিযোগ তুলে জেলাশাসককে লিখিত অভিযোগ জানান। সেই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়েছিল। সূত্রের দাবি, কেন এই অভিযোগ উঠছে তা নিয়ে এ দিন সভাধিপতিকে প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ অর্চিতা বিদের কাছে জানতে চান, কোন কোন কাজের টেন্ডার ডাকা হয়নি? সমন্বয়ের অভাবে উন্নয়নের কাজে বাধা এলে মেনে নেওয়া হবে না বলে সভাধিপতি ও কর্মাধ্যক্ষদের কড়া বার্তা দেন মমতা। দরকার পড়লে পদাধিকারিকদের বদল করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন। দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপকে জেলা পরিষদের সমস্যা মেটাতে সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসার নির্দেশ দেন মমতা। সভা শেষে মঞ্চ ছেড়ে নামার পথেও জেলা পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, “ভাল করে কাজ করো, আমি খবর রাখব।” এ দিনের দলীয় বৈঠকে রানিবাঁধ ব্লকের দায়িত্বে কে রয়েছেন, তা নিয়েও খোঁজখবর নেনে মমতা।
পরে সভাধিপতি অনুসূয়া বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। কাজকর্ম কেমন চলছে তা নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন তিনি।” পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ অর্চিতা বলেন, “দিদি সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে বলেছেন। তাঁর নির্দেশই শেষ কথা।” সহ-সভাধিপতি পরিতোষ জানান, জেলা পরিষদ চালানোর ক্ষেত্রে যে সমস্যা হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। তবে অরূপ বলেন, ‘‘জেলা পরিষদে সমস্যা কিছু নেই। কোথাও কোথাও বোঝাপড়ায় গোলমাল হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো শীঘ্রই জেলা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসে কোথায়, কী কাজ আটকে রয়েছে খোঁজ নেব।’’
পঞ্চায়েত ভোটে দল সাফল্য পেলেও পাঁচ বছর আগের লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের পরাজয়ের কথা এ দিনও মমতার মুখে শোনা গিয়েছে। বিজেপির সাংসদদের উদ্দেশ্যে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘আগেরবার বিজেপি বাঁকুড়ার দু’টো আসনে জিতেছিল। জেতার পরে আর এসেছে? আর খোঁজ নিয়েছে? কিছু দিয়েছে? ভোটের আগে আবার গ্যাস বেলুন ফোলাবে। গ্যাস বেলুন ফুটো করে দিতে হবে।’’ রাজ্য সরকার শিল্প, রাস্তাঘাট গড়ছে বলে তিনি দাবি করেন। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের দাবি, “বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় যান কি না মানুষই জবাব দেবেন। লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের মানুষ রাজ্য সরকারের বঞ্চনা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায় দিতে মুখিয়ে রয়েছেন।”