Mamata Banerjee

মঞ্চে প্রশাসনিক মমতা, নির্বাচনের দিশা মিলল কই

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই পঞ্চায়েত ভোটের সম্ভাবনা। তখন এই জেলায় তিনি সভা করতে আসতে পারবেন কি না তা নিশ্চিত নয়।

Advertisement

প্রশান্ত পাল  , শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:৩১
Share:

সভায় তৃণমূল কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

প্রশাসনিক সভা হলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই মঞ্চ থেকেই পঞ্চায়েত ভোটে দলের কর্মীদের দিশা দেখাবেন, এমন প্রত্যাশা নিয়েই অনেকে এসেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার হুটমুড়ার সভায় মুখ্যমন্ত্রীর মুখে যতটা না রাজনৈতিক কথা শোনা গেল, তার থেকে বেশি প্রশাসনিক মমতাই ধরা দিলেন।

Advertisement

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই পঞ্চায়েত ভোটের সম্ভাবনা। তখন এই জেলায় তিনি সভা করতে আসতে পারবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। তাই এই মঞ্চ থেকেই তিনি দলীয় কর্মীদের ভোটে প্রচারের সুর বেঁধে দেবেন বলে প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে সামান্য সুর তুললেও ঝালদা পুরসভা প্রায় দখলে নিয়ে আসা কংগ্রেস কিংবা গ্রামে গ্রামে আন্দোলন চালিয়ে সংগঠন চাঙ্গা করা সিপিএমের সম্পর্কে একটি শব্দও তৃণমূল নেত্রীর মুখে শুনতে না পাওয়াটা কিছুটা হলেও বিস্ময়ের। কারণ অতীতে তিনি প্রশাসনিক সভা থেকে বহুবার বিরোধীদের দিকে তোপ দেগেছেন।

এ নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ শুরু করেছেন। সিপিএমের পুরুলিয়ার জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূল দিশাহারা হয়ে পড়েছে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে রাজনৈতিক বার্তা দেবেন দলের কর্মীদের?” সে দাবি খণ্ডন করে জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘প্রশাসনিক সভা থেকে রাজনৈতিক বার্তা মুখ্যমন্ত্রী দেন না। দল ও সরকারের মধ্যে সীমারেখাটা মুখ্যমন্ত্রীর থেকে ভাল কেউ বোঝেন না। সেটা বিরোধীরা ভুলে যাচ্ছেন।”

Advertisement

এ দিন মমতার বক্তব্যে প্রায় পুরোটা জুড়ে ছিল পুরুলিয়ার উন্নয়নের প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, এ দিন তিনি ৩৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেছেন। এর বাইরে তিনি যে পরিষেবা প্রদান করলেন, তার সুবিধা পাবেন জেলার এক লক্ষ ৫৫ হাজার বাসিন্দা। বক্তব্যে ছুঁয়ে গিয়েছেন পুরুলিয়ার শিল্পস্থাপনে তাঁদের সরকারের ভূমিকা। কিন্তু বক্তব্যে পাওয়া যায়নি সেই প্রকল্পগুলিকে তুলে ধরে কী ভাবে দলের কর্মীরা আরও নিবিড় জনসংযোগে নামবেন।

বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘পুরুলিয়া জেলায় আমরা সাংসদ পাইনি। বিধায়ক মাত্র দু’জন পেয়েছি। তা সত্ত্বেও মনে রাখবেন, আমি আপনাদের ভালবাসি। তাই যাঁরা একদিন বলেছিল, পুরুলিয়া জেলায় বিজেপিকে ভোট দিন, তাঁরা সব করে দেবে। একটা কাজও করেনি। আজ পর্যন্ত মানুষকে সাহায্য সবটাই আমরা করে যাচ্ছি। সবটাই আমরা করব। এটা আমাদের দায়বদ্ধতা। আবাসের ক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি অনেকেই পাচ্ছেন না। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার বাড়ি করতে দিচ্ছে না। সময় দিন, আস্তে আস্তে করে করব।’’

দলের নেতা-কর্মীদের তুলনায় তিনি প্রশাসনের আধিকারিক ও সরকারি চিকিৎসকদের উপরে জনসংযোগে বেশি জোর দিয়েছেন। দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘দিদির দূত যাঁরা যাবেন, যাঁর যা সমস্যা রয়েছে, তাঁদের বলবেন সেগুলো আমার কাছে এসে জমা পড়বে। যেটা সম্ভব, সেটা করে দেব। যেটা সম্ভব নয়, সেটা নিয়ে ভাবব কী করে করা যায়।’’ এরপরেই তাঁর নির্দেশ, ‘‘আমি জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের বলি, বিডিওদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে দুয়ারে সরকারের মতো শিবির করতে বলুন। পুরুলিয়া মেডিক্যালের ডাক্তারেরা গ্রামে যান। প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজে থেকে তিন দিনে প্রত্যন্ত গ্রামে যান। এক মাসে একটা গ্রাম গেলেন, আর এক মাসে আর একটা গ্রামে গেলেন।’’

এ নিয়ে বিরোধীরা বলতে শুরু করেছেন, দলের কর্মীদের বদলে তৃণমূলনেত্রী প্রশাসনের উপরেই বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কটাক্ষ, তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা মানুষের কাছে প্রত্যাখাত হয়েছেন। তাই প্রশাসনের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘আমাদের সাংসদ ও বিধায়কেরা এলাকা উন্নয়নের তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা কাজের প্রস্তাব দিলেও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই খরচ করতে দিচ্ছে না প্রশাসন।”

তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এ দিন একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় দলের হারানো জমি ফেরত পেতে উন্নয়নের প্রশ্নে রাজ্যের সদর্থক ভূমিকা তুলে ধরেছেন। মমতাকেও বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমরা সব কিছু করে দিয়েছি। আপনারা শুধু আশীর্বাদ দিয়ে যাবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement