Madhyamik Exam 2024

মেধা-তালিকায় কমল বাঁকুড়ার জৌলুস

পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও পুরুলিয়ায় মাধ্যমিকে কমল পাশের হার। গত বারের চেয়ে এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছিল ১৩,১২৭ জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া, পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৪ ০৮:৪৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP

সার্বিক ভাবে জেলায় গত বারের তুলনায় মাধ্যমিকে পাশের হার বেড়েছে। তবে রাজ্যের মেধা তালিকায় এ বারে বাঁকুড়ার ছাত্রছাত্রীদের দাপট অন্য বারের মতো তেমন দেখা গেল না। যা নিয়ে শিক্ষক মহলেও আলোচনা শুরু হয়েছে। জেলা থেকে এ বার চার কৃতী সম্ভাব্য প্রথম দশে জায়গা পেলেও প্রথম পাঁচে নেই তারা। তালিকায় সম্ভাব্য নবম স্থানে এক ছাত্রী ও দশম স্থানে তিন ছাত্র রয়েছে। কৃতীদের মধ্যে বাঁকুড়া শহর থেকে দু’জন রয়েছে—সম্ভাব্য নবম স্থানাধিকারী অরুণিমা চট্টোপাধ্যায় ও দশম স্থানে থাকা সৌভিক দত্ত। এ ছাড়া, দক্ষিণ বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমার প্রত্যন্ত ব্লক রাইপুরের সৌম্যদীপ মণ্ডল ও তালড্যাংরার সৌমিক খাঁও সম্ভাব্য দশম স্থানে রয়েছে।

Advertisement

জেলা স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, গত বারে বাঁকুড়া জেলায় মাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৭৪.৭২ শতাংশ। এ বারে তা হয়েছে ৭৮.৩০ শতাংশ। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পীযূষকান্তি বেরা বলেন, “মেধা তালিকায় এ বারে জেলার ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা অন্য বারের তুলনায় একটু কম হলেও সার্বিক ভাবে জেলার ফল ভালই হয়েছে। শহরের সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের স্কুলের পড়ুয়ারাও নজর কেড়েছে। স্কুলগুলি নিজেদের ফলাফল পর্যালোচনা করবে।”

এ দিনই জেলার স্কুলগুলির হাতে মাধ্যমিকের মার্কশিট তুলে দেওয়া হয়। মার্কশিট বিলিও শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার একটি প্রথম সারির স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “মেধা-তালিকায় জেলার পড়ুয়াদের সংখ্যা এতটা কম দেখে অবাকই হয়েছি। কেবল পাশের হার বাড়ানো লক্ষ্য হলে আগামী দিনে এই জেলা শিক্ষাক্ষেত্রে নিজের জায়গা কতটা ধরে রাখতে পারবে, প্রশ্ন উঠবে।” এ নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন এবিটিএ-র বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অস্মিতা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “স্কুলে স্কুলে শিক্ষকের অভাব ও শিক্ষক নিয়োগে গোলমালের মতো নানা ঘটনায় স্কুলগুলির পরিকাঠামো ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তার প্রভাব পড়বে ফলাফলে।” পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি গোরাচাঁদ কান্তের তবে দাবি, “ছেলেমেয়েরা ভাল ফল করেছে। আগামী দিনে আরও ভাল হবে। এই সাফল্যে শিক্ষকদের অবদান রয়েছে।”

Advertisement

এ দিকে, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও পুরুলিয়ায় মাধ্যমিকে কমল পাশের হার। গত বারের চেয়ে এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছিল ১৩,১২৭ জন। তবে পাশের হার গত বারের ৭৯.১৬ থেকে হয়েছে ৭৮.৩১ শতাংশ। পাশাপাশি, গত বারে মেধা-তালিকায় জেলার ছ’জন জায়গা করে নিলেও এ বারে রয়েছে এক জনই। পুরুলিয়া জেলা স্কুলের ছাত্র সাম্যপ্রিয় গুরু রাজ্যে মেধা-তালিকায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে।

সামগ্রিক ভাবে পাশের হার কমার মূলে শিক্ষকের অপ্রতুলতাকে দুষছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলি। তাদের দাবি, গত কয়েক বছরে ‘উৎসশ্রী’ পোর্টালের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলি থেকে শিক্ষকেরা অন্য ব্লক, জেলার শহরের স্কুল এমনকি ভিন্ জেলায় বদলি হয়েছেন। বিশেষত গ্রামের স্কুলগুলি শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। তারই প্রভাব পড়েছে ফলে।

এর সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে বাঁকুড়া থেকে অনেকে মেধা-তালিকায় জায়গা করে নিলেও পুরুলিয়ায় তা নিয়মিত নয়। অভাব কি মেধায়? মানতে নারাজ জেলার শিক্ষক শিবির। তাঁদের একাংশের মতে, স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার অনুপাতে শিক্ষকের অপ্রতুলতা এর অন্যতম কারণ। বহু স্কুলই প্রয়োজনীয় তুলনায় প্রায় অর্ধেক শিক্ষক নিয়ে চলছে। এক শিক্ষকের কথায়, “স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। সেই সমস্যা টিউশন বা কোচিং দিয়ে মেটানো যায়। পুরুলিয়াতে তা-ও উন্নত মানের নয়।” আদ্রার নিগমনগর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার চক্রবর্তীর পর্যবেক্ষণ, অভিভাবকদের সচেতনতাও অন্যতম একটা কারণ। যার কারণে স্কুলমুখী কম হচ্ছে পড়ুয়ারা।

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা ভরপুরনাথ জিউ হাইস্কুলের ‘টিআইসি’ নন্দদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় আবার জানান, এখন নবম শ্রেণিতে উঠতেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য ‘ফাউন্ডেশন কোর্স’ করতে মেধাবী ও স্বচ্ছল পরিবারের পড়়ুয়াদের একাংশ ছুটছে দুর্গাপুর বা বাঁকুড়ায়। পুরুলিয়ায় তেমন নামী কোনও সংস্থার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এখনও নেই। প্রশিক্ষণের সুবিধা হবে ওই সব পড়ুয়াদের একাংশ ওই জেলার স্কুলে ভর্তিও হচ্ছে। পুরুলিয়ার মেধা অন্য জেলায় চলে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায়।

পুরুলিয়া জেলা স্কুলের ‘টিআইসি’ সুজিত খাঁ তবে বলেন, “সীমিত সাধ্য, নানা প্রতিকূলতা নিয়েই লড়ে যাচ্ছে পুরুলিয়ার মেধাবীরা। আমাদের স্কুলেই ফি বছর কয়েক জন ছাত্র থাকে, যারা রাজ্যে মেধা-তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য। সামান্য নম্বরের ফারাকে শেষ পর্যন্ত তা হয় না। তবে আমরা বরাবরই চেষ্টা করি, তাদের খামতি ধরিয়ে দিয়ে পরীক্ষার জন্য ভাল ভাবে প্রস্তুত করতে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement