প্রতীকী ছবি।
বাড়ির চৌহদ্দিতে বড়সড় একটি ঘর। ঘরের দরজা খুলতেই দেখা গেল থাকে থাকে সাজানো ধানের বস্তা।
ছাতনার শিউলিপাহাড়ির বাসিন্দা বিদ্যুৎ মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘১৫ বিঘা জমিতে এবার ভালই ধান হয়েছিল। কিন্তু সরকারি মূল্যে তা বিক্রি করার সুযোগই পাইনি।’’ সঙ্গে সংযোজন, “গ্রাম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কিসানমাণ্ডি। পরিবহণ খরচ গুনে ধান নিয়ে গেলেও সব ধান ওরা কিনবে না। গ্রামে ধান কেনার শিবির হয়নি। ফোড়েরা ধানের দর যা দিচ্ছে, তাতে লাভ হবে না। তাই ঘরের ফসল ঘরেই রয়েছে।” ছাতনার খড়বনা গ্রামের বাসিন্দা গৌতম কুণ্ডুর সমস্যা আরও বড়। তিনি মিষ্টির দোকানে কাজ করেন। মেয়ে বাঁকুড়ার সারদামনি গার্লস কলেজের রসায়নবিদ্যায় অনার্স পড়ছেন। টাকার অভাবে মেয়ের টিউশনি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। গৌতমবাবু জানাচ্ছেন, মিষ্টির দোকানে কাজের করার পাশাপাশি বিঘা ছ’য়েক জমিতে ধান চাষ করেন তিনি। এবার ধান ভাল হলেও বিক্রি করতে পারেননি। অর্থাভাবে মেয়ের টিউশনি বন্ধ করতে হয়েছে। গৌতমবাবুর আক্ষেপ, “একদিকে জমির ফসল ঘরে পচছে। অন্যদিকে টাকার অভাবে জন্য মেয়ের টিউশনি বন্ধ করতে হচ্ছে।”
এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে, গ্রামীণ রাস্তা থেকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল—সবই হয়েছে ছাতনায়। তা সত্বেও লোকসভা ভোটের প্রচার করতে গিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ব্লকের বেশিরভাগ পঞ্চায়েতেই ভোট না হওয়ায় চাপা ক্ষোভও রয়েছে অনেকের মধ্যে।
ছাতনার মানুষের মন পেতে এই বিষয়গুলিকে প্রচারের হাতিয়ার করছে বিজেপি। তৃণমূলকে কটাক্ষ করে খড়বনায় একটি দেওয়ালে বিজেপি কর্মীরা লিখেছেন, ‘সব প্রকল্প মোদীর, ভাষণটা শুধু দিদির’। তবে ভোটে এই সবের প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি করছেন ছাতনা ব্লক তৃণমূল সভাপতি পরমেশ্বর কুণ্ডু। তাঁর দাবি, “ব্যাপক উন্নয়নের কাজ হয়েছে ব্লকে। সব ক’টি অঞ্চলেই লিড পাব বলে আমরা নিশ্চিত।” বিজেপির ছাতনার কমলপুর মণ্ডলের পর্যবেক্ষক শ্যামসুন্দর মন্ডলের পাল্টা প্রশ্ন, “যদি এতই আত্মবিশ্বাস থাকে তা হলে কেন পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে দেয়নি তৃণমূল।”
ছাতনা বিধানসভার মধ্যে পড়ছে ইঁদপুর ব্লকও। এই ব্লকের একাধিক গ্রামে ঢুঁ মারলেই শোনা যাচ্ছে রেশন কার্ড থেকে নাম বাদ যাওয়ার গ্রামবাসীর ক্ষোভ। ধান কেনার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক শিবির না হওয়ায় ক্ষুব্ধ অনেকেই। অনেকের অভিযোগ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দুর্নীতি হয়েছে।’’ ইঁদপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি সৌমিত্র পতি বলেন, “রেশন কার্ড যাঁরা পাননি তাঁদের আমরা সমস্যা কোথায় তা বুঝিয়েছি। ঘর দেওয়ার নামে দুর্নীতি হয়েছে এমন অভিযোগ আমাদের কাছে নেই।’’ বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে বলে তাঁর অভিযোগ। উন্নয়নের স্বার্থেই ইঁদপুর ব্লকে তৃণমূলকে মানুষ ভোট দেবেন বলে বিশ্বাস ওই তৃণমূল নেতার। বিজেপির ইঁদপুর মণ্ডল সভাপতি বিবেকানন্দ সাহানার অভিযোগ, “তৃণমূল এলাকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে গত পঞ্চায়েত ভোটে। মানুষ অতিষ্ঠ।”
গত বিধানসভা নির্বাচনে ছাতনা বিধানসভা কেন্দ্রে হোঁচট খেয়েছিল তৃণমূল। জয়ী হয়েছিলেন বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী আরএসপির ধীরেন্দ্রনাথ লায়েক। তিনি পেয়েছিলেন ৭৩ হাজার ৬৪৮ ভোট। যদিও ভোটে জিতে তৃণমূলে যোগ দেন বাম বিধায়ক। বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭১ হাজার ২৩১ ভোট। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ১৩ হাজার ২৮৭।
বিধায়কের দলবদলের পরেই ছাতনায় বামেদের সংগঠন অনেকটাই ভেঙে পড়ে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্টের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে এই ব্লকে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। সিপিএমের ইঁদপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক শৈলেন গোস্বামী বলেন, “এলাকার পুরনো বাম-কর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছেন। তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা পুরোমাত্রায় প্রস্তুত।”
সহ-প্রতিবেদন: শুভেন্দু তন্তুবায়