সমবেত: ভোটের কৌশল নিয়ে কংগ্রেসের বৈঠক। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র
ভোটের রণকৌশল নিয়ে সভা। অথচ প্রার্থী ও দলের জেলা সভাপতিই সেখানে অনুপস্থিত। এখানেই শেষ নয়, উপস্থিত নেতারা সভামঞ্চ থেকে ক্ষোভ উগরে দিলেন দলের জেলা সভাপতির বিরদ্ধেই। বুধবার বিকেলে রামকৃষ্ণ সভাগৃহে কংগ্রেসের নির্বাচনী সভার ছবি ছিল এমনই।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, প্রায় ‘অচেনা’ দুই প্রার্থী কতটা লড়াই করবেন বীরভূম ও বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে— জেলা কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীরা যখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন, ঠিক তখনই জেলা সদর সিউড়িতে একটি নির্বাচনী বৈঠকে দলের ছন্নছাড়া চেহারা আরও প্রকট হল।
রামকৃষ্ণ সভাগৃহে এ দিন নির্বাচনী সভার আয়োজন করেছিল কংগ্রেস। উপস্থিত ছিলের জেলার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রসিদ, সিউড়ি মহকুমা সভাপতি অসীম মুখোপাধ্যায়, শহর সভাপতি মর্শেদ আলি, আইএনটিইউসি-র জেলা সভাপতি মৃণাল বসু সহ কয়েক জন নেতা। কিন্তু যাঁর সমর্থনে সভা, বীরভূম কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ইমাম হোসেন-ই সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন। ছিলেন না দলের জেলা সভাপতি, সিউড়ি শহরেরই বাসিন্দা সঞ্জয় অধিকারীও। সভা থেকেই জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মহকুমা সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘সঞ্জয় অধিকারীকে সভাপতি হিসেবে মানি না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জেলা কংগ্রেসের অন্দরমহলের খবর, বর্তমানে শাসকদলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে সরিয়ে সঞ্জয় অধিকারীকে জেলা সভাপতি করার বিষয়টি দলের কয়েক জন নেতার পছন্দ হয়নি। পছন্দ হয়নি লোকসভা ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থীদেরও। সেই বিরোধ চলছেই। দ্বন্দ্ব মেটার সম্ভাবনা আপাতত নেই। উপস্থিত নেতাদের তরফে এ দিন প্রশ্ন তোলা হয়, যিনি কিছু দিন আগেও বিজেপি করতেন, যাঁর তেমন কোনও অবদান দলের প্রতি নেই, রাতারাতি তাঁকে সভাপতি করে দিলে মানা হবে কী ভাবে!
জেলা শহরের রাজনীতি সচেতন মানুষ বলছেন— ‘‘যেখানে তৃণমূল, বাম, বিজেপি এমনকী এসইউসি পুরোদমে প্রচার চালাচ্ছে, সেখানে একটি সর্বভারতীয় দল কংগ্রেসের কোনও দেওয়াল লিখনই কার্যত হয়নি শহরে।’’
কেন তা হয়নি, দলের নেতাদের মধ্যে বিভাজন থেকেই স্পষ্ট।
এ নিয়ে জেলা সভাপতি সঞ্জয় অধিকারী অবশ্য বলছেন, ‘‘সিউড়ি শহরেই গুটিকয়েক নেতা এটা করছেন। গোটা জেলায় কোনও সমস্যা নেই। বীরভূম কেন্দ্রে মনোনীত প্রার্থী ভাল অঙ্কের ভোট পাবেন। এমনিতে কোথাও কারও সঙ্গে কোনও সমস্যা নেই।’’ কংগ্রেসের অন্দরে সঙ্ঘাত যে লেগেছে তা দিন দুই আগেই স্পষ্ট ছিল। দিন দুয়েক আগে সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লিতে বৈঠক হলেও যাননি সিউড়ির নেতারা। মৃণালবাবু বলছেন, ‘‘সিউড়ির একসময় দলীয় কার্যালয় থাকলেও, ওটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি। আগেই তাতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই যাইনি। আমরা দীর্ঘদিন কংগ্রেস করছি। ভোট কংগ্রেসের হয়েই করব। প্রার্থী এলেও করবো, না এলেও করব।’’
কেন প্রার্থী অনুপস্থিত জানতে প্রশ্ন করা হলে মিল্টন রসিদ জবাব দেন, ‘‘তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেন তিনি এলেন না জানব।’’
প্রার্থী ইমাম হোসেন অবশ্য বলছেন, ‘‘নেতাদের মধ্যে সমীকরণ নিয়ে কোনও খবর আমার কাছে নেই। আমি যেতাম। নির্বাচানের মনোনয়ন সংক্রান্ত কাগজ তৈরি করতে গিয়ে সময় পাইনি।’’