গ্রন্থাগারিক অনিতা মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
সরকারি নিয়মের অন্যথা করে এক প্রবীণা গ্রন্থাগারিককে অন্যত্র বদলি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নানুর চণ্ডীদাস স্মৃতি সাধারণ পাঠাগারের ওই গ্রন্থাগারিক প্রৌঢ়ার বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে প্রশাসনের সকল স্তরে স্মারকলিপি দিয়েছেন পাঠক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, ওই গ্রন্থাগারিক, অনিতা মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই গ্রন্থাগারের ভোল বদলে গিয়েছে।
জেলা গ্রন্থাগার দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে ওই গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারিক হিসেবে যোগ দেন অনিতা। সেই সময় গ্রন্থাগারের পাঠক সংখ্যা ছিল ১৭১ জন। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৫৭ জন। তাঁর কার্যকালেই পাঠক পরিষেবার নিরিখে ওই গ্রন্থাগার ২০১৫ সালে সেরা মহকুমা গ্রামীণ গ্রন্থাগার, ২০১৭ সালে মডেল গ্রন্থাগার ও ২০১৯ সালে জেলার সেরা গ্রামীণ গ্রন্থাগার হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
গ্রন্থাগারের সদস্যরা জানান অনিতা নিজের দায়িত্বে বোলপুর সংশোধনাগার, বৃদ্ধাশ্রমেও নিয়মিত পাঠক পরিষেবা দেন। বই পৌঁছে দিয়ে আসেন। এলাকায় আনাজ ব্যবসায়ীদের বইমুখী করার জন্য তাঁদের দোকানে দোকানে গিয়ে গল্প পাঠ করেও শুনিয়ে আসেন। গ্রন্থাগারে মাসিক সাহিত্যসভা ও পত্রিকা প্রকাশেরও ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
গ্রন্থাগার সূত্রে খবর, অনিতার চাকরির কার্যকাল রয়েছে আর মাত্র ২২ মাস। বর্তমানে তিনি ভাঙা পা নিয়ে ভাল ভাবে হাঁটতে পারেন না। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস-সহ বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত তিনি। এই অবস্থায় তাঁকে প্রায় ৫ কিমি দূরে উচকরণ গ্রামীণ গ্রন্থাগারে বদলি করা হয়েছে।
অনিতা বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কার্যকালের মেয়াদ দু’বছরের কম হলে কোনও গ্রন্থাগারিককে অন্যত্র বদলি করা যায়না। তার উপরে আমি নানা অসুখে ভুগছি। তাই জেলা গ্রন্থাগার অধিকর্তার কাছে আমার বদলির নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছি।’’
অনিতার বদলির নির্দেশ আসার খবর ছড়িয়ে পড়তেই পাঠক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ তাঁর বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে সরব হয়েছেন। বিশাল সিংহ, শোভারানি মণ্ডল, রিম্পা দাসদের মতো পাঠকেরা বললেন, ‘‘উনি তিল তিল করে গ্রন্থাগারটিকে সাজিয়ে তুলেছেন। সেটিকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন। তাঁর বদলি আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’’ জেলা ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগার অধিকর্তা সুদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।’’