—প্রতীকী চিত্র।
দেশ জুড়ে সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা। ব্রিটিশ শাসনের সময়কাল থেকে চলে আসা তিন আইন বাতিল করে এ বছর থেকে বলবৎ হল নতুন তিন আইন।
তবে, কার্যকর হওয়ার প্রথম দিনেই এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ। রাজ্যের বিভিন্ন আদালতের মতোই বীরভূমের প্রতিটি আদালতে এ দিন ‘কালা দিবস’ পালন করেন আইনজীবীরা। কোথাও হাতে কালো ব্যাজ পরে কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা, কোথাও আবার আদালত চত্বরেই এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন আইনজীবীরা। তাঁদের এই বিরোধিতার ফলে ন্যায় সংহিতা চালু হওয়ার প্রথম দিনেই কার্যত বন্ধ থাকল আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্ম। পাশাপাশি নতুন আইন নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে পুলিশের একাংশেও।
ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া তিনটি আইন, ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি), ভারতীয় সাক্ষ্য আইন (এভিডেন্স অ্যাক্ট) এবং ফৌজদারি কার্যপ্রণালী বিধি (সিআরপিসি)— এই তিনটি আইন বাতিল করে ভারত সরকার প্রণয়ন করেছে তিনটি নতুন আইন। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম৷ তিনটি আইনই কার্যকর হল সোমবার, অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে৷ এ দিনই সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট এবং দুবরাজপুর আদালতে কালা দিবস ও কর্মবিরতি পালন করেন বার কাউন্সিলের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, ন্যায় সংহিতায় যে-সব পদ্ধতি মানার কথা বলা রয়েছে, তেমন পরিকাঠামো পুলিশ-প্রশাসন বা বিচার ব্যবস্থার হাতে নেই। ফলে, এই নিয়মে সুবিধার থেকে বেশি অসুবিধার মুখে পড়তে হবে সাধারণ মানুষ, আইনজীবী, পুলিশ-সহ সকলকেই৷
কিছু মহলের আশঙ্কা, এই নয়া বিচার ব্যবস্থায় হয়রানি আরও বাড়বে না তো?কারণ, নতুন আইনে পুলিশ চাইলে ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে একাধিক দফায় অভিযুক্তকে তাদের হেফাজতে পেতে পারবে। এই নতুন আইন ‘দমনমূলক’ বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী শিবিরও।
জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইনের বিভিন্ন ধারা যে-ভাবে হঠাৎ বদলে গেল, তার সঙ্গে আইনজীবীরা এখনও সড়গড় নন। যেমন আইপিসির ৩০৭ ধারায় যে খুনের চেষ্টার ধারা ছিল, তা এখন ১০৭ নম্বর ধারায় এসেছে। এই পরিবর্তনগুলি আত্মস্থ করতে অনেকটা পড়াশোনা প্রয়োজন। অথচ বাজারে এখনও তেমন বই বিশেষ আসেনি।’’ তাঁর সংযোজন, “আমরা চেয়েছিলাম আরও কিছুটা সময় দিয়ে এবং প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করার পরে এই আইনগুলি চালু করা হোক। তা না হওয়ার কারণেই এই প্রতিবাদ।”
রামপুরহাট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উৎপল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “নতুন আইনে যে পরিবর্তনগুলি আনা হয়েছে, তার কোনও প্রয়োজনই ছিল না। এতে উপকারের পরিবর্তে আইনজীবী, মক্কেল, পুলিশ সকলেই সমস্যায় পড়বেন।’’
নতুন আইন নিয়ে জেলা পুলিশের কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে, পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের রবিবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, জেলা জুড়ে শুধু এক দিনেরই প্রশিক্ষণ ছিল। শুধু এক দিনের প্রশিক্ষণে নতুন আইন বোঝা মুশকিল। গোটা বিষয়টি ভাল করে বুঝে নিয়ে তার ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য নিবিড় প্রস্তুতি দরকার। সেই সময় তাঁরা পাননি বলেই জানিয়েছেন জেলার পুলিশকর্মীদের অনেকে।
পুলিশের কী কী অসুবিধা হতে পারে, সে প্রসঙ্গে সরকারি আইনীজবী মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যে তিনটি নতুন আইন এসেছে, তা প্রয়োগ করার মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এখনও নেই। যেমন, নতুন নিয়মে কোনও তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্তের আদ্যোপান্ত ভিডিয়ো রেকর্ডিং রাখতে হবে।
কিন্তু, একটি থানায় এই কাজ সঠিক ভাবে করতে হলে অন্তত ১০-১৫ জন ভিডিয়োগ্রাফার প্রয়োজন। যা কার্যত কোনও থানার হাতেই নেই।
সে কথা মেনেছেন জেলা পুলিশের এক কর্তাও। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন আইনে ডিজিটাইজেশনের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। সেটার জন্য অভ্যাসের প্রয়োজন। তদন্তকারী অফিসারের পক্ষে প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিডিয়োগ্রাফি করা ঝক্কির।’’
সরকারি আইনজীবী আরও জানান, অনলাইনে কেউ কোনও অভিযোগ করলে নতুন আইনে তাকে এফআইআর হিসাবে গণ্য করা এবং তিন দিনের মধ্যে অভিযোগকারীর স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে বলে বলা হয়েছে। কিন্তু, অনলাইন ও অফলাইনে এক সঙ্গে কাজ চালানোর মতো পর্যাপ্ত পুলিশকর্মীই তো নেই জেলায়!