চলছে শেষ মুহূর্তের সাজানো। ঠেকানো যাচ্ছে না অত্যুৎসাহীদের। নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলের ঘাসবনের মধ্যে দিয়ে উঁকি মারছে বাইসন। একটু দূরে শাবক নিয়ে দাঁড়িয়ে দু’টি হরিণ। কিছুটা এগোতে না এগোতে একেবারে ঘাড়ে পড়ার উপক্রম করছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বিষ্ণুপুরের চৌকান গ্রাম লাগোয়া দশ হেক্টরের জঙ্গল জুড়ে তৈরি লালগড় নগরবনে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে হাজির সবাই। তবে, রক্তমাংসের নয়, নেহাতই বিশাল আকার খেলনা সেগুলি। বিষ্ণুপুরের মন্দির-জঙ্গলের পাশাপাশি পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে এই নগরবন, আশা বন দফতরের।
বিষ্ণুপুর রেঞ্জের চৌকান বিটে লালবাঁধের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, বাসুদেবপুর জঙ্গল লাগোয়া বনাঞ্চলটি আগে স্থানীয়েরা চড়ুইভাতির জন্য ব্যবহার করতেন। বন দফতর সম্প্রতি নগরবন যোজনা প্রকল্পে পরিকল্পিত ভাবে সাজিয়ে তুলছে বনাঞ্চলটি। ফুল-ফলের বাগান, প্রিয়জনের স্মৃতিতে গড়ে তোলা বাগান, যোগব্যায়ামের জায়গা, চিলড্রেন পার্ক, ওষধির বাগানের পাশাপাশি পদ্ম, শালুক, শাপলা-সহ নানা জলজ উদ্ভিদে ভরা একটি জলাশয়ও রয়েছে। বিষ্ণুপুরের পাঞ্চেত বনবিভাগের ডিএফও সত্যজিৎ রায় জানান, নগরবনে প্রবেশের জন্য বড়দের জন্য দশ টাকা ও ছোটদের জন্য পাঁচ টাকার টিকিটের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।
চৌকান বনসুরক্ষা কমিটির সদস্য সরস্বতী টুডু, ভীম লোহার, গণেশ লোহার, বাহাদুর লোহার, রানি কিস্কুরা সাজিয়ে তুলছেন ফলের বাগান, ওষধি বাগান। এতে অসময়ে কর্মসংস্থানের উপায়ও হচ্ছে, জানান তাঁরা। পাঞ্চেত বনবিভাগের এডিএফও ইয়াকুব আলম জানান, ফলের বাগানে আপেল, জামরুল, লিচু, কামরাঙ্গা, ড্রাগন ফলের গাছ রয়েছে। জলের সংস্থানও করা হয়েছে গাছের পরিচর্যায়। নগরবন ঘিরে পরিখা কাটা হয়েছে এবং পরিবেশবান্ধব জিনিস দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। জগার্স পার্কের সঙ্গে নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহের নামে লাগানো গাছ দিয়ে একটি আলাদা নক্ষত্রবনও তৈরি করা উঠছে। বন দফতর সূত্রে জানা যায়, সবুজায়নের লক্ষ্যে ও পরিবেশের স্বার্থে এই পরিকল্পনা।
চৌকান বিট অফিসার বিমান চক্রবর্তীর কথায়, “সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নগরবনের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। উৎসাহী মানুষের ভিড় বাড়ছে। নগরবনে প্লাস্টিক পুরোপুরি নিষিদ্ধ। বিষ্ণুপুরের মন্দির, হস্তশিল্প, বাসুদেবপুর জঙ্গলের সঙ্গে লালগড় নগরবনও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে, এটাই আশা।”