লাভপুরে কুঁয়ে নদীতে জল বাড়ছে। (ডান দিকে), বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ আটকানো চলছে। নিজস্ব চিত্র।
এক রাতের ভারী বৃষ্টিতে দু’কূল ছাপিয়ে বইছে কুঁয়ে নদী। এর ফলে লাভপুর ব্লকের কুরুন্নাহার এবং ঠিবা পঞ্চায়েত এলাকার নদী তীরবর্তী গ্রামে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গলাইচণ্ডী, শীতলগ্রাম, ঠিবা, খাঁপুর, কাঁদরকুলো, জয়চন্দ্রপুর, চতুর্ভুজপুর, হরিপুরের মতো গ্রামের বাসিন্দাদের ঘুম উবেছে। প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাঁধ মেরামত করছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লাভপুরের মাঝ বরাবর বয়ে গিয়েছে কুঁয়ে নদী। প্রায় প্রতি বছর বর্ষায় কুঁয়ে নদী এবং লাঙলহাটা বিলের জলে কুরুন্নাহার, ইন্দাস ও ঠিবা পঞ্চায়েত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ বারেও ভারী বৃষ্টিতে সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই তলিয়ে গিয়েছে বিঘের পর বিঘে ধানী জমি। ভেসে গিয়েছে বহু পুকুরের মাছ। কাঁদরকুলোর উৎপল মণ্ডল, খাঁপুরের মানব মণ্ডল ৮ বিঘে করে জমিতে ধান পুঁতেছিলেন। বাকি ৪ বিঘে জমি ধান পোঁতার জন্যে তৈরি করা ছিল। ছিল বীজতলাও। সব এখন জলের তলায়। দু’জনে বলছেন, ‘‘বিঘে প্রতি ৫-৬ হাজার টাকা খরচ করে ধান পুঁতেছিলাম। সব এখন জলের তলায়। এক দিনের মধ্যে জল না-সরলে সব হেজেমজে শেষ হয়ে যাবে।’’
ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার লাভপুরে ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধানচাষের লক্ষমাত্রা ধার্য হয়েছে। এখনও পর্যন্ত চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৮০ হেক্টরে। তার মধ্যে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ৫১২৯ হেক্টর জমি। এ ছাড়াও ২৪ হেক্টর কলাই, ৩৯ হেক্টর ভুট্টা, ১১ হেক্টর বাদাম-সহ অন্যান্য ফসল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ব্লক সহ কৃষি আধিকারিক কাজল সাহা জানান, দিন দুয়েকের মধ্যে জল না-সরলে ওই সব জমির ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ভেসে গিয়েছে বেশ কিছু পুকুরের মাছও। খাঁপুরের সুজয় মণ্ডল, বিকাশ মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ করে আমরা পুকুরে মাছ চাষ করেছিলাম। নদীর জল ঢুকে সেই সব পুকুর ভেসে গিয়েছে।’’ ব্লক মৎস দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃষ্টির জলে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশটি পুকুর ভেসে গিয়েছে। এ দিকে কাঁদরকুলো গ্রাম লাগোয়া সেতুটি তলিয়ে যাওয়ায় কীর্ণাহারের সঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকার সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ২০-২৫ কিলোমিটার ঘুরপথে অথবা নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।
শনিবার বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপারে সজাগ থাকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইক যোগে প্রচার করা হয়। এ দিন সকালে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এলাকায় যান লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, বিডিও শিশুতোষ প্রামাণিক, থানার ওসি সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়, কীর্ণাহারের ওসি আশরাফুল হক, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী , ঠিবা অঞ্চল সভাপতি সায়িন কাজী প্রমুখ। বিধায়ক বলেন, ‘‘যে-সব জায়গায় বাঁধ দুর্বল আছে, সেখানে গ্রামবাসী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সেচ দফতরের কর্মীরা মাটির বস্তা দিয়ে মেরামত করছেন। প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।’’
বিকেলে লাভপুরে পরিদর্শনে যান জেলা সভাধিপতি কাজল শেখও। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত।’’ বিডিও জানান, আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ব্লকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঠিবা এবং কুরুন্নাহার পঞ্চায়েত এলাকায় দু’টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। সেখানে ২০টি পরিবারকে সরিয়ে আনা হয়েছে।