কীর্ণাহারে প্রণব। ফাইল চিত্র
পুজো এলেই আজও প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ঘরে ফেরার স্মৃতিতে ভাসে কীর্ণাহার সন্নিহিত এলাকা।
গোপালনগরের বাসুদেব মণ্ডল, গোমাইয়ের অসীম ঘোষরা বললেন, ‘‘প্রণববাবুকে দেখার জন্য ষষ্ঠীর দিন সমস্ত কাজ সামলে রাখতাম। সকাল সকাল খাওয়া দাওয়া করে হেডিপ্যাডে কাছে গিয়ে জড়ো হতাম। ফিরতাম সন্ধ্যাবেলায়। প্রণববাবু হেলিপ্যাডে নামার পরই মনে হত যেন পুজো লেগে গেল।’’ একই অনুভূতি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন চায়ের দোকানদার প্রিয়ম দাস, মিষ্টির দোকানদার শিশু ঘোষদের। তাঁরা বললেন, ‘‘প্রণববাবুকে দেখার জন্য ষষ্ঠীর দিন এত লোক সমাগম হত যে দোকান সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হত। অল্পক্ষণের মধ্যে মালপত্র সব বিক্রি হয়ে যেত।’’ ২০২০ সালের ৩১ অগস্ট প্রণববাবুর মৃত্যু হয়। তারপর থেকেই ষষ্ঠীর বিকেলের পরিচিত সেই দৃশ্যটা হারিয়ে গিয়েছে।
প্রণব যেখানেই থাকুন না কেন, প্রায় প্রতি বারই বাড়ির পুজোয় যোগ দিতে কীর্ণাহার লাগোয়া মিরিটি গ্রামে আসতেন। পুজোয় নিজে চণ্ডীপাঠও করেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকার সময় থেকেই ষষ্ঠীর দিন বিকেলে তাঁকে নিয়ে বায়ূসেনার একটি কপ্টার এসে নামত কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া মাঠে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছে বায়ূসেনার তিনটি কপ্টার। তাঁকে দেখার জন্য প্রতি বছর বাঁশের বেড়ার ধারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন দূর- দূরান্তের মানুষজন। প্রণব কপ্টার থেকে নেমে সারা মাঠ ঘুরে হাত নেড়ে জনতাকে অভিবাদন জানাতেন। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে কনভয় ছুটত পরোটা গ্রামে দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। জনতাও তাঁর কনভয়ের পিছু নিত। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর দিদির বাড়ির সামনেই তাঁকে দেওয়া হয়েছিল ‘গার্ড অফ অনার।’ দিদির বাড়ি থেকে সন্ধ্যাবেলায় মিরিটি গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিতেন তিনি। পুজোর চারদিন কাটিয়ে ফের কপ্টারে দিল্লি ফিরে যেতেন তিনি।
প্রণব শেষ ২০১৯ সালে বাড়ির পুজোয় যোগ দিতে এসেছিলেন। সেবারে অবশ্য পানাগড় থেকে সড়ক পথে ১৮টি গাড়ির কনভয় তাঁকে নিয়ে এসেছিল। পুজোয় তাঁর বাড়ি ফেরা উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসন তো বটেই, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও সাজ সাজ রব পড়ে যেত। ষষ্ঠীর দিন বিকেলে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হেলিপ্যাডের সামনে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমাতেন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথ চট্টরাজ, গৌতম ঘোষরা জানালেন, ‘‘প্রণববাবু আমাদের অভিভাবক ছিলেন। তাঁর কথা সব সময়ই মনে পড়ে। পুজো এলে বেশি মনে হয়। পুজোর চারদিন তাঁর কাছে থাকার সুযোগ পেয়েছি।’’