প্রতীকী ছবি।
মদের বোতলপিছু ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ উঠল বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমার ডেপুটি এক্সাইজ় কালেক্টরের বিরুদ্ধে। গত শনিবার খাতড়ার ফুলকুসুমায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি মদের দোকান ‘সিল’ করে দেয় আবগারি দফতর। সোমবার ওই দোকানের মালিক অসীম মণ্ডল মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘কাটমানি’ না দেওয়ায় এই কাজ করেছেন ওই আবগারি আধিকারিক। মহকুমাশাসক (খাতড়া) রাজু মিশ্র বলেন, ‘‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
সিল হওয়া দোকানটির মালিক অসীমবাবুর অভিযোগ, মাস দুয়েক আগে কাজে যোগ দেওয়ার পরে ওই আবগারি আধিকারিক মদের বোতল পিছু ৪৫ পয়সা করে ‘কাটমানি’ নিতেন ডেপুটি এক্সাইজ় কালেক্টর (খাতড়া) । মাস গেলে তাঁকে প্রায় আড়াই হাজার টাকা দিতে হত। অসীমবাবু বলেন, ‘‘কাটমানি না দিলে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী অভয় দেওয়ার পরে তোলা দেওয়া বন্ধ করে দিই। তার পরেই দোকান সিল করে দিয়ে যান ওই আধিকারিক।’’
মহকুমাশাসকের অফিসে ওই দোকানের মালিকের সঙ্গে গিয়েছিলেন ‘বাঁকুড়া ডিস্ট্রিক্ট অল এক্সাইজ় লাইসেন্সি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি, সম্পাদক-সহ বেশ কয়েক জন সদস্য। সংগঠনের সম্পাদক চন্দ্রনাথ আচার্য জানান, ফুলকুসুমার ওই দোকানটি সিল করার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, কিছু মদের বোতলের ব্যাচ নম্বর নথির সঙ্গে মিলছে না। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন গোডাউন থেকে মদ নিয়ে আসি, তখন পেটি খুলে ব্যাচ নম্বর মেলানোর কোনও সুযোগ থাকে না। আবার পেটির বাইরের ব্যাচ নম্বরের সঙ্গে অনেক সময়ে দেখি ভিতরের বোতলের ব্যাচ নম্বর মিলছে না।’’
তাঁর দাবি, এই গরমিল আগেও হত। কিন্তু ‘কাটমানি’ দেওয়া বন্ধ হওয়ায় সেটাকে ছুতো করে দোকান সিল করা হয়েছে। চন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘কাটমানির ব্যাপারে বর্তমানে টাকা লেনদেন ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বিগত দিনগুলিতে যে টাকা আদায় করা হয়েছে, তা ফেরত দেওয়ার দাবি তুলছি।’’ গিয়েছিলেন ‘বাঁকুড়া ডিস্ট্রিক্ট অল এক্সাইজ় লাইসেন্সি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি গুরুপদ মণ্ডল এ দিন দাবি করেছেন, সরকারি গোডাউন থেকে মদ দেওয়ার সময়ে প্রতিটি বোতলের ব্যাচ নম্বর মিলিয়ে দিতে হবে।
গত নভেম্বরে পড়শি জেলা পুরুলিয়ার ১৬ জন আবগারি আধিকারিককে সাসপেন্ড করেছিল নবান্ন। তাঁদের মধ্যে জেলার আবগারি সুপারিনটেন্ডেন্ট তো ছিলেনই, সঙ্গে ছিলেন সাব-ইনস্পেক্টর, কনস্টেবলরাও। পুরুলিয়ার মদ বিক্রেতাদের একাংশের অভিযোগ ছিল তাঁরা বোতল পিছু মাসোহারা তোলা আদায় করতেন। সুপারিনটেন্ডেন্টের বোতল-পিছু ২০ পয়সা আর বিশেষ আবগারি কনস্টেবলের বোতল-পিছু দু’পয়সা— এই হিসাবে অভিযোগে মোট তোলার অঙ্কটা ছিল মাসে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা।
বাঁকুড়ার অভিযুক্ত আধিকারিকের সঙ্গে এ দিন বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। বাঁকুড়া জেলা আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট সৌম্য সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের দফতরের কোনও আধিকারিকের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বলে শুনিনি।’’ তিনি জানিয়েছেন, প্রশাসনের তরফে দফতরে জানানো হলে তদন্ত হবে।