কাউন্সিলরদের নিয়ে কংগ্রেসের অফিসে নেপাল। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
ঝালদা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর জবা মাছোয়ারকে রাজ্য সরকার ‘চেয়ারপার্সন’-এর দায়িত্ব দেওয়ার পরের দিনই শনিবার, পূর্ব ঘোষণা মতো ওই পুরসভার নির্দল কাউন্সিলর শীলা চট্টোপাধ্যায়কে পুরপ্রধান নির্বাচন করলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেস ও নির্দল কাউন্সিলরেরা। বৈঠক শেষে কংগ্রেস কাউন্সিলর বিপ্লব কয়াল দাবি করলেন, সাত জন কাউন্সিলরের সর্বসম্মতিক্রমে শীলা পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এ দিনই পরে জবা পুরভবনে গিয়ে দায়িত্বভার গ্রহণের কথা লিখিত ভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
ফলে রাজ্য সরকারের ওই বিজ্ঞপ্তির পরে বিরোধীদের এ দিনের পুরপ্রধান নির্বাচনের বিষয়টিকে প্রশাসন কতটা মান্যতা দেবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দার সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের নির্দেশ মোতাবেক পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, এ থেকে একপ্রকার স্পষ্ট জেলা প্রশাসন রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বিজ্ঞপ্তিকেই মান্যতা দিচ্ছে। সে অর্থে শীলার পুরপ্রধান হিসেবে নির্বাচন আপাতত প্রশাসনের কাছে গুরুত্ব নাও পেতে পারে।
পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে কংগ্রেসের এ দিনের পুরপ্রধান নির্বাচনের সভা করার কোনও যুক্তিই নেই। এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির জন্যই কংগ্রেস এ সব করছে।’’ তবে পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর দাবি, ‘‘রাজ্য সরকারের ওই বিজ্ঞপ্তিতে পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে। নিয়ম মেনে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এ দিনের পুরপ্রধান নির্বাচন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে।’’ শীলা দাবি করেছেন, ‘‘বিধি অনুযায়ী ঝালদার এসডিও-র নির্বাচিত পুরপ্রধানকে শপথবাক্য পাঠ করানোর কথা। সে ক্ষেত্রে গড়িমসি হলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘দায়িত্ব পেয়ে ভাল লাগছে। পুরপরিষেবার দিকে নজর দেওয়াই হবে মূল লক্ষ্য।’’
শুক্রবার প্রকাশ করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২১ নভেম্বর পুরপ্রধান অপসারিত হয়েছেন। ২৮ নভেম্বর উপপুরপ্রধান ইস্তফা দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে যতদিন না ঝালদায় নতুন পুরপ্রধান নির্বাচন হচ্ছে, ততদিন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জবা মাছোয়ার চেয়ারপার্সন হিসেবে কাজ করবেন। ঘটনা হল, এ দিন কংগ্রেস যে পুরপ্রধান নির্বাচনের সভা করেছে, সেটির জন্য কংগ্রেসের তরফে কাউন্সিলরদের চিঠি ছাড়া হয়েছিল ২৯ নভেম্বর (উপপুরপ্রধানের ইস্তফা দেওয়ার পরের দিন)। সেই যুক্তি দেখিয়ে হয়তো প্রশাসন কংগ্রেসের এ দিনের পুরপ্রধান নির্বাচনকে বৈধতা না-ও দিতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অনুমান। তবে এ নিয়ে প্রশাসনের তরফে বক্তব্য মেলেনি। কংগ্রেস অবশ্য ওই বিজ্ঞপ্তি ত্রুটিপূর্ণ বলে দাবি করেছে।
বৈঠক শেষে কংগ্রেসের পাঁচ ও নির্দল দুই কাউন্সিলর কংগ্রেসের অফিসে যান। নির্দল কাউন্সিলর সোমনাথ কর্মকার এবং শীলার স্বামী তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর কালিপদ চট্টোপাধ্যায় কংগ্রেসে যোগ দেন। সোমনাথের দাবি, ‘‘আগে কংগ্রেসে ছিলাম। আবার ঘরে ফিরলাম। উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলকে বোর্ডগঠনে সমর্থন জানানোর পরে ওদের সঙ্গে থাকতে গিয়ে দমবন্ধ লাগছিল। মুক্তি পেয়ে ভাল লাগছে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে যোগ দেননি কোনও তৃণমূল কাউন্সিলর। বৈঠকের শেষে কিছুক্ষণের জন্য পুরভবনে দেখা যায় প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের সুরেশ আগরওয়াল এবং প্রশাসন মনোনীত পুরপ্রধান জবা মাছোয়ারকে। সুরেশের দাবি, ‘‘বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে কংগ্রেসের এই বৈঠকের কোনও যৌক্তিকতা নেই। সরকারের তরফে জবাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাতে তিনি রাজি আছেন। সেটা লিখিত আকারে প্রশাসনের কাছে জানাতে এসেছি।’’ তবে এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি জবা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যা বলার সেটা সুরেশবাবুই বলবেন।’’
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এ দিন পুরভবন এবং তার কাছাকাছি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। চারপাশে ছিল প্রচুর পুলিশ। শুরুতে পুরভবন চত্বরে ঢুকতে পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় সংবাদমাধ্যমকেও। পরে পুরুলিয়ার জেলাশাসকের হস্তক্ষেপে অফিস চত্বরে ঢুকতে তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়।