ফাইল চিত্র।
পুরুলিয়া পুরসভায় প্রশাসকমণ্ডলীতে আচমকা রদবদলের পরে, তৃণমূলের অন্দরেই ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পরে, শুক্রবার বিদায়ী পুরপ্রশাসক সামিমদাদ খান ফেসবুকে একটি লেখা ‘পোস্ট’ করেছেন। সেখানে তাঁর দাবি, অনেকেই প্রশ্ন করছেন, কেন এই পরিবর্তন? কিন্তু তিনি কোনও উত্তর দিতে পারছেন না। তিনি লিখেছেন, ‘‘সবাই একই কথা বলছে, আমি কিছু জানি না। তা হলে কি ভূতের খেলা শুরু হয়েছে আমাদের পার্টিতে?’’ উত্তর না পেলে মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে এবং দলের জন্য যাঁরা ‘জীবন দিচ্ছেন’ তাঁরাও ‘এর পর চিন্তা করবেন’ বলে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
সামিমদাদ খানকে সরিয়ে প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতোকে পুরুলিয়া পুরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। মঙ্গলবার বিষয়টি পুরসভাকে জানিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর তিন সদস্যকেও সরিয়ে নতুনদের আনা হয়েছে। সামিমদাদ বলেন, ‘‘আমি পুরসভাতেই কাজ করছিলাম। বিকেলে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে ই-মেল আসে, আমাকে সরানো হয়েছে। তার পাঁচ মিনিট আগেও কিছু জানতাম না।’’ পুরপ্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়া মৃগাঙ্কবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমিও বিষয়টি হঠাৎ করেই জানতে পেরেছি।’’
পুরুলিয়ায় তৃণমূলের অন্যতম সংখ্যালঘু মুখ সামিমদাদ খান। জেলা কমিটির সহসভাপতির পদে রয়েছেন। পুর-বোর্ডের মেয়াদ ফুরনো আগে, পুরুলিয়ার পুরপ্রধান ছিলেন। তার পরে পুরপ্রশাসকের দায়িত্ব পান। সামিমদাদের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে শহরের ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটি ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে ছিল। তার অন্যতম সামিমদাদ খানের ২২ নম্বর ওয়ার্ড। তাঁর আমলে পুরসভায় কাজকর্মও হয়েছে অনেক।’’ কিন্তু দলীয় বিষয় নিয়ে ফেসবুকে মুখ খুললেন কেন? সামিমদাদ বলেন, ‘‘ঘটনার আকস্মিকতায় আমি আহত। কীসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত, জেলা নেতৃত্বের কাছে জনে-জনে জানতে চেয়েছি। এটুকু জানার অধিকার আমার রয়েছে বলেই মনে করি। কিন্তু সবাই আমাকে জানিয়েছেন, তাঁরা কিছুই জানেন না। তাই ফেসবুকে লিখেছিলাম।’’
প্রশ্ন উঠছে প্রশাসকমণ্ডলীতে নতুন আনা সদস্যদের নিয়েও। তৃণমূলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমান সরকার বলেন, ‘‘প্রশাসকমণ্ডলীতে এমন এক জনকে আনা হয়েছে, যিনি পুরসভাতেই ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত। সামনে নির্বাচন আসছে। অনেক কর্মীই পুরসভার এই আচমকা রদবদল নিয়ে এবং যাঁদের আনা হল তাঁদের সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছেন। তাই আমরা নেতৃত্বের কাছে জানতে চেয়েছি, কীসের ভিত্তিতে এই রদবদল। এটা জানার অধিকার কর্মীদের আছে।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডু বলেন, ‘‘পুরপ্রশাসকমণ্ডলীতে রদবদল নিয়ে কর্মীদের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। গোটা বিষয়টি আমরা রাজ্যকে জানিয়েছি।’’