‘আক্রান্ত’ তৃণমূল নেতা রিঙ্কু চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র
দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূমে তৃণমূল নেতাদের একসঙ্গে চলার বার্তা দেওয়ার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। জেলার একাধিক জায়গায় দলের অন্দরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল। শনিবার তৃণমূলের নানুর ব্লক কার্যালয়ে ব্লক সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি রিঙ্কু চৌধুরীকে মারধরের অভিযোগ উঠল দলের কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখ ও ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। ইলামবাজারেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ল তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। চলল হাতাহাতি। আহতও হলেন একজন।
নানুরে কাজল সেখের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের গোষ্ঠীবিবাদ বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। দল সূত্রে দাবি, অনুব্রত জেলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত দলে কাজলকে কোণঠাসা হয়ে থাকতে হয়েছে। সাম্প্রতিক জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী কাজলকে জেলা কোর কমিটির সদস্য করে দিয়ে যান। তারপরই নানুরে দলের নতুন সমীকরণ তৈরি হয় বলে তৃণমূল সূত্রে দাবি। অনুব্রত অনুগামী হিসাবে পরিচিত ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য কাজলের শিবিরে যোগ দেন। তাঁদের সঙ্গে অনুব্রত অনুগামী হিসেবে পরিচিত জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান এবং তাঁর অনুগামীদের সংঘাত শুরু হয়।
দলের একাংশের ক্ষোভ, কাজল ব্লক সভাপতিকে দিয়ে কেরিমের অনুগামীদের ‘ডানা ছাঁটতে’ শুরু করেন। তাঁদের অনেককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সম্প্রতি ব্লকের ৫টি অঞ্চল কমিটির সভাপতি, ব্লক সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি, ব্লক যুব সভাপতি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে (আনন্দবাজার ওই পোস্টের সত্যতা যাচাই করেনি) এ নিয়ে সরব হন। শুক্রবার কালীঘাটের বৈঠকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব পদচ্যুতদের স্বপদে বহাল রেখে একসঙ্গে চলার বার্তা দেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
তার পরেও দ্বন্দ্ব মেটেনি। রিঙ্কু চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘দলনেত্রীর ডাক পেয়ে কালীঘাটের বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে একসঙ্গে চলার নির্দেশ পেয়ে পার্টি অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু সুব্রত ভট্টাচার্য এবং কাজল শেখ অনুব্রত মণ্ডলের লোকেদের পার্টিঅফিসে জায়গা নেই বলে আমাকে মারধর করে বের করে দেন।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে সুব্রতর দাবি, ‘‘ঘটনার সময় কাজল ছিল না। রিঙ্কুকে দেখে কর্মী-সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সে জন্য আমি তাকে চলে যেতে বলি। কিন্তু সে আমাকে মারতে আসে। তখন কর্মীরা তাকে বের করে দেয়।’’ কাজল এবং কেরিম অবশ্য ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
দলীয় কর্মসূচি নিয়েও বিবাদ প্রকাশ্যে এসেছে তৃণমূলের। শুক্রবার ইলামবাজারের ঘুড়িষা গ্রাম পঞ্চায়েতের নোহনা গ্রামে তৃণমূলের একটি দল নামোপাড়ায় দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি প্রচার করতে গেলে তৃণমূলের অপর গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের বিবাদ বাধে। ওই গোষ্ঠী জোরপূর্বক এলাকায় ঢুকতে গেলে নামোপড়া এলাকার তৃণমূল কর্মীরা বাধা দিতে বিপক্ষের মধ্যে শুরু হয় বচসা থেকে হাতাহাতি। ঘটনায় এক তৃণমূল কর্মী আহতও হন বলে সূত্রের খবর। যদিও এ নিয়ে শনিবার পর্যন্ত কোথাও কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।
বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, “এর থেকে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে তৃণমূল দলে কোন শৃঙ্খলা নেই। দিন দিন তাদের গোষ্ঠীকোন্দল বেড়েই চলেছে।” তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে কোর কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেব।’’