দুর্দান্ত ফল করেও ওদের সঙ্গী দুর্ভাবনা

সেই অর্থে স্বাচ্ছল্যের মুখ দেখেনি দুই পরিবার। দু’জনেরই বাবা খুব কষ্ট করে সংসার চালান। দু’জনেরই লক্ষ্য, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরিবারকে স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া। সোমবার সেই লক্ষ্যেরই প্রথম ধাপটা সাফল্যের সঙ্গে ডিঙোলো চন্দ্ররাজ ও পারমিতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০১:৫৭
Share:

চন্দ্ররাজ দত্ত ও পারমিতা ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র

সেই অর্থে স্বাচ্ছল্যের মুখ দেখেনি দুই পরিবার। দু’জনেরই বাবা খুব কষ্ট করে সংসার চালান। দু’জনেরই লক্ষ্য, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরিবারকে স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া। সোমবার সেই লক্ষ্যেরই প্রথম ধাপটা সাফল্যের সঙ্গে ডিঙোলো চন্দ্ররাজ ও পারমিতা। অনটনের সঙ্গে লড়াই করে উচ্চ মাধ্যমিকে দুর্দান্ত ফল করেও ভবিষ্যতের চিন্তা কোথাও যেন মিলিয়ে দিয়েছে বাঁকুড়ার এই দুই কৃতী পড়ুয়াকে।

Advertisement

বড়জোড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র চন্দ্ররাজ দত্ত ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাজ্যের মধ্যে নবম স্থান পাওয়ায় এ দিন নতুন করে তাকে চিনল বড়জোড়া। মাথার উপর ঠাকুরদার তৈরি করে দেওয়া বাড়ির ছাদ থাকলেও পরিবারে স্বচ্ছলতা মোটেই নেই। ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা এই মেধাবীর চোখে খুশির ঝিলিকের বদলে এ দিন যেন দুর্ভাবনার ঘোর।

চন্দ্ররাজের বাবা সঞ্জয় দত্ত বড়জোড়ার একটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। সেখানে শিক্ষকতা করে তিনি মাসে হাজার তিনেক টাকা পান। আর গৃহশিক্ষকতা করে বড়জোর আরও হাজার দুয়েক টাকা। তিনি জানাচ্ছেন, মেয়েকে নার্সিং পড়াতে মাসে হাজার দুয়েক টাকা ঋণ মেটাতে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ছেলের ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে বাবাকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সঞ্জয়বাবু বলছেন, “ছেলের স্বপ্ন পূরণ করার সামর্থ আমার নেই। ছেলে ভাল ফল করলেও তাই আমার মনে কোনও শান্তি নেই। জানি না কী হবে।’’ চন্দ্ররাজের মুখের হাসিও কোথায় মিলিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতের কথা ভাবলেই।

Advertisement

চন্দ্ররাজ মাধ্যমিক পাশ করার পর পরিবারের কথা ভেবে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন আত্মীয় ও স্কুলের শিক্ষকরা। তাঁরাই নানা ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এই কৃতীকে উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফলের জন্য উৎসাহ জুগিয়েছেন। তাঁদের ইচ্ছে পূরণ করে চন্দ্ররাজ বাংলায় ৯৩, ইংরেজিতে ৯৪, রসায়নবিদ্যায় ৯৮, অঙ্কে ৯৭, পদার্থবিদ্যায় ৯৭, জীববিদ্যায় ৯৮ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু চন্দ্ররাজ যে এখন ডাক্তারি পড়তে চায়। পড়াশোনার খরচও অনেক। যা বহন করার সামর্থ নেই সঞ্জয়বাবুর। চন্দ্ররাজের গলায় তাই এই খুশির দিনেও বেদনার সুর— “ছেলেবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ডাক্তার হব। কিন্তু টাকার অভাবে ডাক্তারি পড়তে পারব কি না তার নিশ্চয়তা নেই।”

এ দিন রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে বাঁকুড়া জেলায় মেয়েদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের কলাবিভাগের ছাত্রী পারমিতা ঘোষ। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৯। পারমিতা বাংলায় পেয়েছে ৯৭, ইংরেজিতে ৯২, কম্পিউটারে ৯৬, অর্থনীতিতে ৯৫, ভূগোলে ৯৪ ও দর্শনে ৯৭। পারমিতা অবশ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার নয়, তার লক্ষ্য আইএএস হওয়া। কিন্তু বড়জোড়ার চন্দ্ররাজের মতো তারও বাড়ির অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল। বিষ্ণুপুরের রাধানগরের বাসিন্দা পারমিতা। বাবা জহর ঘোষ গৃহশিক্ষকতা করে মাসে কয়েক হাজার টাকা রোজগার করেন। সেই টাকাতেই তিন মেয়েকে বড় করছেন তিনি। পারমিতা সবার ছোট।

সে বলে, “আইএএস হওয়া আমার স্বপ্ন। কিন্তু তার জন্য অনেক পড়াশোনা করতে হবে। খরচও অনেক।” জহরবাবু বলেন, “মেয়ের স্বপ্ন অনেক দূর। আমরাও চাই সে বড় হোক। কিন্তু আর্থিক ভাবে আমরা দুর্বল। এখানেই ঠোক্কর খাচ্ছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement