অষ্টাদশী: বৃষ্টি মাঝি। নিজস্ব চিত্র
নিজের পায়ে দাঁড়ানোই লক্ষ্য দিনমজুর পরিবারের অষ্টাদশী কন্যার। পড়াশোনায় সে একনিষ্ঠ। পরিশ্রমী। আচমকা যে দিল্লি থেকে ডাক আসবে, ভাবেননি খানাকুলের গড়বেড়িয়া গ্রামের বৃষ্টি মাঝি। মনোবল বেড়ে গিয়েছে তাঁর।
কাল, ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস। জুনিয়র এনসিসি ডিভিশন (স্কুল স্তর) থেকে দিল্লির লালকেল্লায় কুচকাওয়াজে যোগদানের জন্য মনোনীত হয়েছেন খানাকুলের ছত্রশাল রাধানগর বীরেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের এই ছাত্রী।। গত ৩১ জুলাই দিল্লি রওনা হন। এখন সেখানে জোরকদমে মহড়া চলছে।
শনিবার দিল্লি থেকে ফোনে বৃষ্টি বলেন, ‘‘নিজের পায়ে দাঁড়ানোই লক্ষ্য আমার। সেই মনোবল আরও বেড়ে গেল স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় কুচকাওয়াজে যোগ দিতে পেরে। প্রতিদিন রাত তিনটা নাগাদ ডাক পড়ে। টানা সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মহড়া চলে। দুপুরে কিছুটা বিশ্রামের পর বিকেলে ফের মহড়া। প্রথম কয়েকটা দিন ভয় করছিল। এখন ভাল লাগছে। এমন দিনের সাক্ষী থাকব ভেবেই ভাল লাগছে।’’
লালকেল্লায় কুচকাওয়াজে মেয়েকে দেখতে পাওয়ার প্রতীক্ষায় বসে আছেন বৃষ্টির বাবা-মা। দু’কামরার অ্যাসবেসটসের ছাউনির বাড়িতে বসে বৃষ্টির মা সুজাতা এ দিন বলেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই সকাল থেকে মাঠে কাজে যাই। মেয়ে নিজে রান্না করে খেয়ে স্কুলে যায়। ও খুব পরিশ্রমী।’’ বাবা লক্ষ্মণ বলেন, “আমার তিন মেয়ের মধ্যে বড় দু’জনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সবাই ছোট মেয়ের প্রশংসা করছে, ভাল লাগছে।” তিনি জানান, জমি ভাগ নিয়ে আলু এবং পাট চাষ করেন। মেয়ের খেলাধুলোয় আগ্রহ বরাবর।
ছাত্রীকে দেখতে উৎসুক স্কুলের সকলেও। স্কুলের শিক্ষক রহমতুল্লাহ মোল্লা বলেন, “শারীরিক সক্ষমতা, শৃঙ্খলা, সাহস, নেতৃত্বদান-সহ একাধিক গুণে বৃষ্টির এই সাফল্য। প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার মেয়ের ‘ড্রিল’ খুব ভাল।’’ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সদানন্দ বিশ্বাস জানান, গড়বেড়িয়া থেকে মুণ্ডেশ্বরীর শাখা হরিণাখালি নদীর সাঁকো পার হয়ে স্কুলে আসতে হয় পড়ুয়াদের। আর্থিক অনটন এবং বাড়ির কাজ সামলেও বৃষ্টি কোনওদিন অনুপস্থিত থাকেনি। তাঁর কথায়, ‘‘বন্যাপ্রবণ গ্রামের এই স্কুলের ছাত্রী দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে যোগ দেবে, এটা আমাদের গর্বের বিষয়।’’
বৃষ্টিকে নতুন রূপে দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন গ্রামবাসীও।