প্রতীকী ছবি।
কাল, সোমবার থেকে আদ্রা ডিভিশনে ফের ছুটতে চলেছে আট জোড়া ট্রেন। সে খবরে যতটা উচ্ছ্বাস, চারটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে মেল / এক্সপ্রেসে স্পেশালে পরিণত করায় ভাড়া বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ততটাই ক্ষোভ জমেছে ট্রেনযাত্রীদের মধ্যে। সূত্রের দাবি, এরই মধ্যে ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক আধিকারিকের নির্দেশ সামনে আসায়, ওই চারটি ট্রেনের ভাড়া দুই থেকে তিন গুণ পর্যন্ত পর্যন্ত বাড়তে চলেছে বলে জল্পনা হাওয়া পেয়েছে।
সূত্রের খবর, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সহকারী চিফ কর্মাশিয়াল ম্যানেজার (স্পেশাল) অজিতকুমার তিরকে আদ্রা ও খড়্গপুর ডিভিশনের সিনিয়র ডিসিএমদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, খড়্গপুর-গোমো ও আসানসোল-খড়গপুর এই দুই মেল / এক্সপ্রেস স্পেশাল ট্রেনের অসংরক্ষিত দ্বিতীয় শ্রেণির ভাড়া হচ্ছে এক্সপ্রেস ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেণির মতো।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘চারটি নতুন মেল / এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হচ্ছে।’’ তিনি বিশদে না বলতে চাইলেও রেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘মেল/ এক্সপ্রেস ট্রেন চালানো হলে স্বাভাবিক ভাবেই ভাড়া বাড়ে। কোভিড পরিস্থিতিতে দূরপাল্লার কিছু ট্রেন স্পেশাল ট্রেন হিসেবে চালানো হচ্ছে। তার ভাড়াও কিছুটা বেশি।’’
রেলের একটি সূত্রের দাবি, আসানসোল-খড়্গপুর এবং খড়গপুর-গোমো মেল এক্সপ্রেস স্পেশাল দু’টিতে অসংরক্ষিত আদ্রা থেকে আসানসোলের ভাড়া ১০ টাকা থেকে বেড়ে হতে যাচ্ছে ৩০ টাকা। একই ভাবে আদ্রা থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৭৫ টাকা। আরও দুই ট্রেন চক্রধরপুর-হাওড়া এবং বোকারো হাওড়া মেল / এক্সপ্রেস স্পেশাল ট্রেন দু’টির ভাড়াও সেই হারেই বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে, অবশেষে আদ্রা ডিভিশনে আট জোড়া এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন শুরুর ঘোষণায় খুশি হয়েছিল সব মহল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে প্যাসেঞ্জার হিসেবে চলা চারটি ট্রেনকে মেল / এক্সপ্রেসে পরিণত করার ফলে, ভাড়া বাড়ার আশঙ্কায় এ বার ক্ষুব্ধ অনেকেই।
চক্রধরপুর-হাওড়া, বোকারো-হাওড়া, খড়্গপুর-গোমো এবং আসানসোল-খড়্গপুর এই চারটি ট্রেন দীর্ঘসময় ধরেই প্যাসেঞ্জার হিসেবেই চলত। নতুন নির্দেশিকাতে এই ট্রেনগুলিকে স্পেশাল ও মেল / এক্সপ্রেস করা হয়েছে। সূত্রের খবর, ট্রেনগুলির শ্রেণি বদল করা হলেও স্টপ কমানো হয়নি। আগের মতোই খড়্গপুর থেকে গোমো পর্যন্ত সমস্ত স্টেশনেই দাঁড়াবে খড়্গপুর-গোমো মেল / এক্সপ্রেস। অন্য দিকে, আসানসোল থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত সমস্ত স্টেশনেই থামবে আসানসোল- খড়্গপুর মেল / এক্সপ্রেস। একই ঘটনা ঘটছে হাওড়া-চক্রধরপুর ও হাওড়া-বোকারো মেল / এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রেও।
ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে তাঁদের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয় বলেই দাবি করেছেন আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষ। তবে রেলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০০ কিলোমিটারের বেশি কোনও ট্রেন চললেই সেটিকে স্পেশাল ট্রেন হিসেবে গণ্য করে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। সে যুক্তিতেই ভাড়া বাড়ছে আদ্রা ডিভিশনের চারটি ট্রেনের।
ট্রেনগুলির তকমা বদল করে ঘুরপথে দু’-তিন গুণ ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ করছে রাজনৈতিক দলগুলি। বাঁকুড়ার সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ তথা লোকসভায় রেলের স্থায়ী কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়ার অনুমান, দুই প্যাসেঞ্জার ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরাতেই দুই থেকে তিন গুণ ভাড়া বাড়াচ্ছে রেল। হাওড়া-চক্রধরপুর ও হাওড়া-বোকারোর সংরক্ষিত কামরা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় ভাড়া বাড়বে আরও কয়েক গুণ বেশি।
তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ট্রেনের টিকিটে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি তুলে দিতে চাইছে। এ সব তারই পদক্ষেপ।” সোমবার রেল বোর্ডের কাছে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি লিখছেন বলে জানিয়েছেন বাসুদেববাবু।
তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সহ-সভাপতি জয় বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘বিজেপির সরকার কোনও দিনই সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না। যেখানে লকডাউনে লোকের রোজগার কমেছে, সেখানে শুধু মাত্র ট্রেনের তকমা বদলে ভাড়া দ্বিগুণ, তিন গুণ করে দেওয়া হলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।’’
বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার বলেন, ‘‘রেল সুনির্দিষ্ট নিয়মে চলে। কী হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে বলব।’’