অগ্রিম টাকাকড়ি নিয়ে পাততাড়ি গোটালেন ‘ব্যবসায়ী’

দোকানে বিক্রিবাটার কাজ সামলানোর জন্য যাঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল, তাঁরা জানাচ্ছেন মোটা টাকার মাস মাইনের কড়ারে কাজে যোগ দিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ০০:০৫
Share:

সেই দোকানের সামনে জটলা। বিষ্ণুপুরে। নিজস্ব চিত্র

জিনিস দেওয়ার নামে বাজার থেকে অগ্রিম কয়েক লক্ষ টাকা তুলে পাততাড়ি গোটানোর অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বিষ্ণুপুর শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ময়রাপুকুর এলাকার ঘটনা। বৃহস্পতিবার জিনিস নিতে গিয়ে অনেকে দেখেন, দোকানে ঝাঁপ পড়েছে। যে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ওই ব্যক্তি থাকতেন, সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জিনিসপত্র নিয়ে কোথাও চলে গিয়েছেন তিনি। পুলিশ আপাতত দোকানটি ‘সিল’ করেছে।

Advertisement

এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেছেন, দিন চব্বিশ আগে ময়রাপুকুর এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে দোকান খোলেন ওই ব্যক্তি। তাঁকে আগে এলাকায় দেখা যায়নি। দোকানে রাখা থাকত আসবাব, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র ইত্যাদি। সব কিছুর দর দু’রকমের হত। কিনে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে নিলে বেশি দাম। আর যদি কিছু টাকা অগ্রিম দিয়ে দিন পনেরো পরে জিনিস নিলে প্রায় ৪৫ শতাংশ ছাড়।

কারও কারও সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু অগ্রিম দিলে ‘পাকা রসিদ’ মিলছিল। তাতে ‘ভ্যাট’ নম্বর লেখা। স্থানীয় সূত্রের দাবি, কয়েক হাজার মানুষ অগ্রিম টাকা জমা করেছিলেন। প্রতিদিন টাকা জমা দেওয়ার লাইন পড়ে যেত। যে বাড়িটি ভাড়া নিয়ে কারবার চালাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি, সেটির মালিক বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘চেন্নাইয়ের ওই ব্যক্তির সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে একটা চুক্তি হয়েছিল। সেই নথি দিয়েই উনি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আসবাবের শো-রুম খোলেন। এক মাসের বাড়ি ভাড়া বাবদ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম।’’ বাড়ির মালিকের দাবি, তিনি ঘুণাক্ষরেও গোলমাল টের পাননি। এমনকি একটি আলমারির জন্য অগ্রিম দিয়েছিলেন।

Advertisement

সেনহাটি কলোনির নিত্যরঞ্জন বিশ্বাসের দাবি, ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। আলমারি, ডাইনিং সেট ও আধুনিক গ্যাস আভেন পাওয়ার কথা ছিল। নাকাইজুড়ির বাসিন্দা প্রশান্ত গড়াইয়ের দাবি, হাজার ছয়েক টাকা জমা দিয়েছিলেন স্টিলের বালতি, কাঠের ড্রেসিং টেবিল, ফ্যান ইত্যাদি কেনার জন্য। শুক্রবার তাঁর জিনিসপত্র পাওয়ার কথা ছিল। জিতেন্দ্রনাথ গড়াইয়ের দাবি, ৯,৩০০ টাকা জমা দিয়েছিলেন কাপড় কাচার যন্ত্র কেনার জন্য। এই ভাবে প্রচুর মানুষ দাবি করেছেন, বাতানুকুল যন্ত্র কেনার জন্য ওই দোকানে টাকা জমা করেছিলেন তাঁরা।

দোকানে বিক্রিবাটার কাজ সামলানোর জন্য যাঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল, তাঁরা জানাচ্ছেন মোটা টাকার মাস মাইনের কড়ারে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও মাইনে পাননি। শুধু প্রতিদিন টিফিন খরচ হিসেবে ৫০ বা ১০০ টাকা হাতে ধরে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ এসে ওই বন্ধ দোকানের সামনে ভিড় করেন। দাবি তোলেন, দোকানের তালা ভেঙে ভিতরের জিনিসপত্র বিক্রি করে বকেয়া মেটানো হোক। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দোকান সিল করে।

বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা পুর দফতরে জমা করা হয়েছিল। ব্যবসা ছিল আসবাব ও গৃহস্থালির জিনিসপত্রের। অভিযোগ হলে পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement