School students

সারা বছর রাস্তায় জলকাদা, সাপের ভয়! আতঙ্ক সঙ্গী করে স্কুলে যাতায়াত বাঁকুড়ার তিন গ্রামের পড়ুয়াদের

তিনটি গ্রাম থেকে স্কুলের দূরত্ব কমবেশি দেড় কিলোমিটার। কিন্তু যে রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে হয় সারাবছরই সেখানে জলকাদা থাকে। ঝোপঝাড়ে চন্দ্রবোড়া সাপের বাস।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৩
Share:

এ ভাবেই স্কুলে যাতায়াত করে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

দেড় কিলোমিটারের আলপথ। সেই রাস্তায় হাঁটুসমান জলকাদা থাকে সারা বছর। রাস্তার দু’পাশে ঘন ঝোপে থাকে বিষধর সাপ থেকে বিষাক্ত পোকামাকড়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই বিপদসঙ্কুল আলপথ দিয়েই যাতায়াত করছে শতাধিক পড়ুয়া। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বারংবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এ ভাবেই যাতায়াত করছে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের নুতনগ্রাম, হালাইগড়িয়া, বাগরাকোন্দার ছেলেমেয়েরা।

Advertisement

নুতনগ্রাম, হালাইগড়িয়া, বাগরাকোন্দা, তিন গ্রামের নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে বিহারজুড়িয়া হাই স্কুল। গ্রামগুলো থেকে স্কুলের দূরত্ব কমবেশি দেড় কিলোমিটার। কিন্তু যে রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে হয় সারাবছরই সেখানে জলকাদা থাকে। রাস্তার দু’ধারে ঝোপঝাড়ে চন্দ্রবোড়া সাপের বাস। কিন্তু পড়াশোনার তাগিদে ওই ‘সাপের পথ’ ধরতে হয় খুদে পড়ুয়াদের। কারণ ঘুরপথ ধরতে হলে প্রায় ৬ কিলোমিটার পেরোতে হয়। বিপদ জেনেও ওই রাস্তা দিয়ে চলে যাতায়াত। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর পর থেকে তাদের বাড়ি ফেরা পর্যন্ত আতঙ্কে কাঁটা হয়ে থাকেন অভিভাবকেরা। আশঙ্কায় থাকেন স্কুল কর্তৃপক্ষও। অভিভাবকদের অভিযোগ, অনেক বার বলেও রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। পাকা রাস্তা তো দূরের কথা, এক কোদাল মোরাম বিছিয়ে দেওয়া হয়নি।

বিহারজুড়িয়া হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র সম্রাট নন্দী বলে, ‘‘স্কুলে যাতায়াতের রাস্তায় সারা বছর জলকাদা জমে থাকে। রাস্তায় সাপের উপদ্রব কম নয়। জীবন হাতে করে আমাদের যাতায়াত করতে হয়।’’ করুণাময় প্রামাণিক নামে এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘পথশ্রী প্রকল্পে সারা রাজ্যে হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এই রাস্তার দিকে কেন প্রশাসনের নজর পড়ে না, জানি না! কিন্তু ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা তো করাতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে বিপদসঙ্কুল পথে ছেড়ে দিতে বাধ্য হই।’’ আর বিহারজুড়িয়া হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষক অংশুমান মণ্ডলের মন্তব্য, ‘‘ওই রাস্তায় কমবেশি একশো পড়ুয়া প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করে। কিন্তু রাস্তায় পদে পদে বিপদ অপেক্ষা করে থাকে। ওদের কথা ভেবে সবসময় আতঙ্কিত থাকি।’’

Advertisement

রাস্তার প্রসঙ্গ তুলতেই শুরু হল শাসক-বিরোধী তরজা। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘এ রাজ্যে এমন কোনও রাস্তা নেই যেখানে পথশ্রী প্রকল্পের হোর্ডিং নেই। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা যে উল্টো, সেটা এই রাস্তা দেখলেই ঠাওর হয়। শাসকদল এবং সরকারের বিজ্ঞাপনের ঢক্কানিনাদে ঢাকা পড়ে গিয়েছে গ্রামবাসীদের রাস্তার দাবি। অবিলম্বে ওই রাস্তা তৈরি না হলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন করব।’’

বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি নিমাই মাজির অবশ্য দাবি, সবই বিরোধীদের অপপ্রচার। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা ওই রাস্তার বিষয়ে কোনও আবেদনই করেননি। বিরোধীরা কী বলল, তাতে কিছুই যায় আসে না। তা ছাড়া ওই রাস্তা আলপথ হওয়ায় প্রথমে জমি অধিগ্রহণ করে তার পর রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। সেটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement