অর্কপ্রভ এবং অর্চিতার বিয়ে। —নিজস্ব চিত্র।
বিয়েতে দিনবদলের বার্তা দিলেন বীরভূমের অর্ক এবং অর্চিতা। গত ২১ নভেম্বর বিয়ে হয়েছে সিউড়ির ইন্দিরাপল্লির বাসিন্দা অর্কপ্রভ সিন্হা এবং ডাঙালপাড়ার অর্চিতা সিন্হার। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে তাঁরা ছেঁটে ফেলেছেন বেশ কয়েকটি প্রথা। তাঁদের মতে, ওই প্রথা নারী স্বাধীনতার বিপক্ষে। এই পদক্ষেপে সায় দিয়েছে দু’জনের পরিবারও। অর্চিতা সমাজকর্মী। অর্কপ্রভ পেশায় চিকিৎসক। স্বামীর হাতে বিয়ের উপহার হিসাবে স্টেথোস্কোপ তুলে দিয়েছেন অর্চিতা।
গত রবিবার নতুন জীবন শুরু করেছেন অর্কপ্রভ এবং অর্চিতা। তাঁদের বিয়েতে ‘কন্যাদান’ হয়নি। অর্চিতাকে ‘ভাতকাপড়’ জোগানোর দায়িত্বও নেয়নি অর্কপ্রভ। বরং দু’জনেই দু’জনের জীবনভর ভাত-কাপড় জোগানোর শপথ করেছেন। শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় মাকে ‘কনকাঞ্জলি’ও দেয়নি অর্চিতা। এক অনুষ্ঠানে এমন একের পর এক প্রথা ভেঙে ফেলা? অর্চিতার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ছেলে কেন শুধু মেয়ের দায়িত্ব নেবে? মেয়েও দায়িত্ব নেবে। এক জন সমাজকর্মী হয়ে আমি এই প্রথার বদল চেয়েছিলাম। কন্যা দান করার বিষয় নয়। কনকাঞ্জলিও হয়নি।’’
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্চিতা এবং অর্কপ্রভর বক্তব্য, ‘‘আমরা চাই সমাজ জুড়ে এমন পরিবর্তন আসুক। বিষয়টি প্রচার হলে প্রত্যেকে যদি এমন ছোট ছোট পরিবর্তন ঘটায় তা হলে খুব আনন্দ পাব।’’
অর্চিতার সিদ্ধান্তের পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁর বাপেরবাড়ি। তেমনই তিনি পাশে পেয়েছেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যদেরও। অর্চিতাকে সাহস জুগিয়েছেন তাঁর স্বামী অর্কপ্রভ। নিয়ম ভাঙার খেলার মধ্যে দিয়েই নতুন জীবন গড়া শুরু করেছেন তঁরা। অর্কপ্রভর বাবা চন্দন সিন্হা যেমন বললেন, ‘‘বিয়েতে যে অনুষ্ঠান তাতে মনে হয় নারী ‘দাসী’। আমরা সেটা ভাঙতে চেয়েছি। সেই জন্য একে অপরকে ভাতকাপড় তুলে দিয়েছে। দু’জনেই দু’জনের দায়িত্ব নেবে। আমরা সেই বার্তাই দিতে চেয়েছি।’’